সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজারের আওয়ামীলীগ নেতারা কে, কোথায়, কেমন আছেন কেউ জানেন না। কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের আন্দোলনে রুপ দেয়া আন্দোলনের মুখে আওয়ামীলীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে প্রস্থানের পর থেকে এখানকার নেতাকর্মীরা গ্রেফতার ও “মব জাস্টিজ” ও আতঙ্কে।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কয়েকজন নেতা-কর্মী সিলেট, জুড়ী ও কমলগঞ্জের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তপথে ভারতে পাড়ি দিয়ে গৌহাটি, শিলং, ডাউকি, জোয়াইসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়া, অনেক নেতা লন্ডন, আমেরিকা ও কানাডা প্রভৃতি দেশে প্রবাসী তাদের স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন প্রভাবশালী নেতা ও সাধারণ কর্মীরাও। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। মৌলভীবাজার জেলার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পথগুলো অনেকটা নিরাপদ বিবেচনায় দেশের অন্য জেলা থেকেও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা জেলার বিভিন্ন সীমান্তপথে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। গ্রেফতারও হয়েছেন একাধিক সাবেক এমপি, মেয়র ও সিটি কাউন্সিলর। দেশ ছেড়ে চলে যেতে গিয়ে বিমানবন্দরে আটক হয়েছেন কয়েকজন নেতা। গত ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আটক হয়েছেন সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের ভাগনা ও ইউপি চেয়ারম্যান সালেহ আহমদ জুয়েল এবং বড়লেখা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জালাল আহমদ।
গত আওয়ামীলীগ সরকার আমলের আগের সরকার আমলের ন্যায় মৌলভীবাজার জেলার প্রায় সবকিছুই ছিল আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের দখলে। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ছিলেন সবকিছুর হর্তাকর্তা। জেলার চার নেতা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি নেছার আহমদ, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান, যুগ্ন সম্পাদক ও পৌরমেয়র মো. ফজলুর রহমান এবং যুগ্ন সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যন মো. কামাল হোসেন এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন কেউ জানেন না। সদ্য সাবেক সাংসদ ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুশ শহীদ, সদ্য সাবেক সাংসদ ও সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও সাবেক সাংসদ সুলতান মো. মনসুর আহমদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদ্য সাবেক সাংসদ শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ নেছার আহমদ, সদ্য সাবেক সাংসদ মোঃ জিল্লুর রহমান, প্রয়াত সমাজকল্যাল মন্ত্রীর সহধর্মীনী ও সাবেক সাংসদ সৈয়দা সায়রা মহসীন, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সাংসদ সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন- এদের মধ্যে সুলতান মো. মনসুর আহমদ ও ড. আব্দুশ শহীদ গ্রেফতার হয়েছেন। সৈয়দা সায়রা মহসীন ও সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন ছাড়া বাকী সবাই নাশকতা ও সহিংসতা মামলার আসামী। এছাড়াও জেলার বড়লেখা পৌরমেয়র, বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান, জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান, কুলাউড়া পৌরমেয়র, কমলগঞ্জ পৌরমেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন, কেউ জানেন না।
আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর থেকে জেলার বিভিন্ন থানা ও আদালতে ২০টিরও বেশি মামলা দায়ের করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপি-ছাত্রদলের নেতারা। এসব মামলায় সাবেক আওয়ামীলীগ সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ, পুলিশ কর্মকর্তা, স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী এবং মদদদাতা হিসাবে ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদেরকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি কয়েক হাজার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে- মৌলভীবাজার জেলার সাবেক সাংসদ সবাই দেশেই আত্মগোপনে আছেন। বাকি নেতাদের মধ্যে ইতিমধ্যে দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালিক তরফদান (ভিপি সুয়েব), যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছেন যুবলীগের সভাপতি সৈয়দ রেজাউর রহমান সুমন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আগে থেকেই যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুল। তবে, সদ্য সাবেক মৌলভীবাজার পৌরমেয়র মো. ফজলুর রহমান ভারতে ও সদ্য সাবেক মৌলভীবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন দেশেই কোথায়ও অবস্থান করছেন বলে অসমর্থিত একাধিক সূত্রে প্রকাশ। আওয়ামীলীগের প্রায় সকল পর্যায়ের কর্মীরাও পড়েছেন বিপাকে। তারা অনেকেই গা ঢাকা দিতে পারছেন না, আবার অবাধে জনসম্মুখেও আসতে পারছেন না “মব জাস্টিজ” এর ভয়ে। তা সত্তেও জনসম্মুখে এসে প্রায় ৫০ জন কর্মী এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন। তাই, অন্যান্য কর্মীরা বিদেশ যাবার চেষ্টা করছেন এবং সক্রিয় রয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে প্রবাসে অবস্থানরত এক আওয়ামীলীগ নেতা বলেন- স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া এ দলের জন্য দূর্দিন ডেকে এনেছে হাইব্রিড নেতারা। এরা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ইত্যাদিতে লিপ্ত ছিলো। ‘কানা (অন্ধ)’ নামে পরিচিত জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান ছিলেন হাইব্রিড নেতাদের গুরু। তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কক্ষকে দলীয় অফিসে পরিণত করেছিলেন। হাইব্রীড নেতাদেরকে নিয়ে প্রত্যহ রাত ২/৩টা পর্যন্ত জম্পেশ আড্ডা দিতেন এখানে। এসব হাইব্রীড নেতাদের মাধ্যমে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা অর্জন করে তিনি দুবাইয়ে বাড়ী কিনেছেন বলেও জনশ্রুতি ছিলো- যদিও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।