মৌলভীবাজারে ক্রমশঃ বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে

মৌলভীবাজারে ক্রমশঃ বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজার জেলায় ৩য় দফা আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি ২২ আগষ্ট রাত থেকে ক্রমশঃ উন্নতি হচ্ছে। জেলার সব নদীর পানি ক্রমশঃ কমতে শুরু করেছে। এবারের ৩য় দফা আকস্মিক বন্যায় নাজেহাল হয়েছেন জেলার বাসিন্দারা, বিশেষকরে নদী ও হাওর তীরের মানুষ। নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে জেলার ৭ উপজেলার ৪৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ২ শতাধিক গ্রামের অন্তত ২ লক্ষাধিক মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন।
মনু, ধলাই ও ফানাই নদীর ২০টি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে পড়া পানিতে প্লাবিত হয়েছে জেলার ৭২৬ বর্গ কিলেমিটার এলাকা। তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও কৃষিক্ষেত। একই অবস্থায় পতিত হয়েছে জেলার হাকালুকি, কাউয়াদীঘি ও হাইল হাওর তীরবর্তী এলাকা। জেলা শহরের মনু নদী তীরের এম সাইফুর রহমান সড়কে (সেন্ট্রাল রোড) গার্ডওয়াল ভাঙ্গার ঝুঁকি দেখা দেয়ায় ২১ আগষ্ট বুধবার রাত থেকে এ সড়কে যান চলাচল ও প্রায় সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। মৌলভীবাজার-সিলেট, মৌলভীবাজার-কুলাউড়া ও মৌলভীবাজার-কমলগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতিতে জেলাজুড়ে বিরাজ করেছে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। মনু নদীর রেলওয়ে ব্রিজ, চাঁদনী ঘাট মনু ব্রিজ, ধলাই নদীর রেলওয়ে ব্রিজ, কুশিয়ারা নদীর শেরপুর ব্রিজ ও জুড়ী নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে- এ পর্যন্ত জেলার ৭ উপজেলায় ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আরও ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা রয়েছে। এখন পর্যন্ত বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ২৪৫ জন। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ৭ হাজার ১৪৫ জন। উপদ্রুত এলাকাসমূহে কর্মরত রয়েছে ৬০টি মেডিকেল টিম। ইতিমধ্যে নগদ ৪৫ লক্ষ টাকা ও ১ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫১৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আরও ১ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে। সরকারি সহায়তা ছাড়াও জেলা জুড়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বন্যার্তদের উদ্ধার, আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য বিতরণসহ সার্বিক সহযোগিতায় মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষে পুরো জেলার বন্যা পরিস্থিতির উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালামসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঝুকিপূর্ণ স্থানগুলো পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষে সতর্কতামূলক মাইকিং করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল চৌধুরী মোহাম্মদ আজিজুল হক হাজারী, ওএসপি (বার), এসজিপি, এনডিসি, পিএসসি, এমফিল মৌলভীবাজার জেলার বন্যাদূর্গত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন- আউশ ধানের ক্ষতির পাশাপাশি সদ্য রোপনকৃত ৭ উপজেলায় আমন ধান ও সবজির ক্ষতি হয়েছে। তবে, এ মুহুর্তে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা যায়নি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহনেওয়াজ সিরাজী জানিয়েছেন- বন্যার পানিতে ১ হাজার ৬৫০টি পুকুর ও দীঘি থেকে ২১০ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মৌলভীবাজারে বন্যার কারণ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের নলকাটা প্রকল্প। ত্রিপুরা রাজ্যে ভারী বৃৃষ্টি হলে নলকাটা প্রকল্পের স্লুইচ গেইট খুলে দিলেই মৌলভীবাজারে বন্যার আশংকা দেখা দেয় এবং কখনও কখনও বন্যা দেখা দেয়। মৌলভীবাজারের মনু নদী বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ওপারে ত্রিপুরা রাজ্যের ধলই জেলার দক্ষিণে উৎপন্ন ও উত্তরমুখী ধারায় প্রবাহিত হয়ে একাধিক ছড়া ও উপনদীর সাথে ত্রিপুরা রাজ্যের ঊনকোটি জেলায় মিলিত হয়েছে। সেখান থেকে উত্তরমুখী ধারায় কৈলাশহরের পাশ দিয়ে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নে প্রবেশ করেছে। ভারত মনু নদীর পানি একতরফা নিয়ন্ত্রনের জন্য ত্রিপুরা রাজ্যের কাঞ্চনবাড়ি ও নলকাটার মাঝামাঝি স্থানে নলকাটা বাঁধ নির্মাণ করেছে। নলকাটা প্রকল্পটি মৌলভীবাজারের মাতারকাপন এলাকার মনু প্রকল্প (স্লুইচ গেট) এর মতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *