শ. ই. সরকার জবলু :: মৌলভীবাজার জেলার ৭২টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার মধ্যে ৪৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভাস্থিত ৪৭৪টি গ্রামের ২ লাখ ৮১ হাজার ৯২০ মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। তবে, আজ ২০ জুন বৃহষ্পতিবার এ সংবাদ পরিশেন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল দেখা যাচ্ছে।
আজ ২০ জুন বৃহষ্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী- সদর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানে ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১৩টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এ পর্যন্ত ১০২৩ জন আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের ৫১০ মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানে ৭টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের ২ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানে ৩টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৭৫টি গ্রামের ৮১ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানে ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪৩৫ জন আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।
বড়লেখা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২৫২টি গ্রামের ৯৩ হাজার ৫০০ মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানে ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০ জন আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।
জুড়ী উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৬৫টি গ্রামের ৪৬ হাজার ৯১০ মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানে ১১০টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৭টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪২০ জন আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।
রাজনগর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের ৮ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানে ২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এ পর্যন্ত ৬৭৫ জন আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।
সবমিলিয়ে জেলার ৭২টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার মধ্যে ৪৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৪৭৪টি গ্রামের ২ লাখ ৮১ হাজার ৯২০ মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। বন্যাকবলিত এলাকাসমূহে মোট ২০৫টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৭০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ২৫৩ জন আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অশ্রয় নিয়েছে ২০০টি গবাদি পশু।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় তৎপড়তা চালানো হচ্ছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়সমূহে কন্ট্রোলরুম স্থাপন ও প্রতিটি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। সরকারী ও বেসরকারীভাবে ত্রাণ ৪৬৫ প্যাকেট শুকনো খাবার, ১ হাজার ২শ প্যাকেট রান্না করা খাবার, প্রতিটি ১০ লিটার পানিপূর্ণ ২৪০ বোতল পানি, ৪২২ মেট্রিক টন জিআর চাল ও নগদ ২ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ জিআর টাকা বিতরণ করা হয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে ৬৫ হাজার। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বন্যার্ত মানুষকে সার্বিক সহযোগীতা ও উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবক টিম (স্কাউট, রোভার স্কাউট, রেডক্রিসেন্ট, যুব রেডক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সর্বোপরী পুরো জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। বন্যায় এ পর্যন্ত নিহত, আহত ও নিখোঁজের তথ্য পাওয়া না গেলেও, আজ সকালে মৌলভীবাজার-শমসেরনগর সড়কস্থ সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের শ্যামেরকোনা এলাকায় বন্যার পানিতে ডুকে ১৫ বছর ও ১০ বছর বয়সী ২ কিশোর নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে।