সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে প্রসবজনিত ফিস্টুলা বিষয়ক ওরিয়েন্টেশন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপ-পরিচালক) ডাঃ প্রণয় কান্তি দাশের সভাপতিত্বে ও সিআইপিআরবি’র প্রকল্প সমন্বয়কারী আলতাফুর রহমানের সঞ্চালনায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারী হাসপাতালের সভাকক্ষে এ ওরিয়েন্টেশন সভা অনুষ্ঠিত হয় সিআইপিআরবি এবং ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ এর সহযোগিতায়।
সভায় হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ বিনেন্দু ভৌমিক, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আহমেদ ফয়সাল জামান, অবস্ এন্ড গাইনী কনসালটেন্ট ডাঃ ইসমত জাহান, ডাঃ মির্জা ফারজানা হলি, ডাঃ রওশন আরাসহ হাসপাতালের অবস্ এন্ড গাইনী বিভাগের সকল সিনিয়র স্টাফ নার্সগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসবজনিত ফিস্টুলা একটি মর্মান্তিক নারী স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বে লাখ লাখ মহিলা এ নিদারুণ ব্যাধিতে ভুগছেন। মা ও শিশুস্বাস্থ্য খাতে ধারাবাহিক অগ্রগতির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে প্রসবজনিত ফিস্টুলার প্রকোপ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। তবুও বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার মহিলা এ জাতীয় স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে দিনযাপন করছেন।
এ রোগে আক্রান্ত নারীদেরকে শারীরিক ও মানসিক সমস্যার পাশাপাশি সামাজিকভাবেও অবহেলা এবং অবমাননার শিকার হতে হয়। তাদেরকে সামাজিক ও পারিবারিক বোঝা মনে করেন অনেকে।
সাম্প্রতিক সময়ে অপারেশনজনিত আয়াট্রোজেনিক ফিস্টুলার হার বিশ্বের অনেক দেশে আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশও এ সমস্যার মুখোমুখি। প্রসবজনিত ফিস্টুলার মতো অপারেশনজনিত আয়াট্রোজেনিক ফিস্টুলায় আক্রান্ত রোগীর জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন- বিলম্বিত প্রসব বা বাধাগ্রস্ত প্রসব, বাল্যবিবাহ ও কম বয়সে গর্ভধারণ, জরায়ুতে অস্ত্রোপচার, অদক্ষ ধাত্রীর মাধ্যমে প্রসব করানোসহ সচেতনতার অভাবে ফিস্টুলা রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জাতিসংঘ সকল দেশকেই একটি প্রজন্মের মধ্যে প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূলের আহবান জানিয়েছে এবং বাংলাদেশ ২০৩০ সাল বা তার পূর্বে এ লক্ষ্য পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহ নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফিস্টুলা চেনার সহজ উপায় হলো- প্রসবের রাস্তা দিয়ে সবসময় প্রস্রাব বা পায়খানা অথবা উভয়ই ঝরতে থাকবে। সমস্যা শুরু হবে বিলম্বিত প্রসবের পর অথবা তলপেট বা জরায়ুতে অপারেশনের পর।
বর্তমানে আমাদের দেশে প্রসবজনিত ফিস্টুলা রোগীর সম্পূর্ণ চিকিৎসা বিনামূল্যে করা হচ্ছে। অর্থাৎ রোগী প্রায় লাখ টাকার চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নিতে পারছেন।
উল্লেখ্য- বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এর সহযোগিতায় সিলেট বিভাগে প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূলের লক্ষ্যে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে জাতীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা সংস্থা সিআইপিআরবি কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করছে। এ কার্যক্রমের আওতায় প্রধানতঃ ফিস্টুলা রোগী শনাক্তকরণ, রেফারের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং পূনর্বাসনের আওতাভূক্ত করতে সহায়তা করা হয়। এ কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে এ ওরিয়েন্টেশন সভার আয়োজন করা হয়। আসুন ! সবাই মিলে ফিস্টুলামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার গর্বিত অংশীদার হই।