ব্রিটেনের এমবিই খেতাবে ভূষিত হয়েছেন ইউকে-বিসিসিআই সভাপতি ড. এম জি মৌলা মিয়া

ব্রিটেনের এমবিই খেতাবে ভূষিত হয়েছেন ইউকে-বিসিসিআই সভাপতি ড. এম জি মৌলা মিয়া

ছালেহ আহমদ সেলিম, বিশেষ প্রতিনিধি :: ব্রিটেনের এমবিই (মেম্বার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার) খেতাবে ভূষিত হয়েছেন ব্রিটেনের বাংলাদেশী কমিউনিটির সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব ও ব্রিটেন-বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ড. এম জি মৌলা মিয়া। বাংলাদেশী কমিউনিটির সেবা ও সমাজকল্যাণে অসামান্য অবদানের জন্য ব্রিটেনের মহামান্য রাজা তাকে এ খেতাবে ভূষিত করেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবনায় ব্রিটেনের মহামান্য রাজার পক্ষ থেকে ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত ‘দ্য লন্ডন গেজেট’-এ নববর্ষ ২০২৪ এর সম্মাননা তালিকায় এ খেতাবের ঘোষণা দেয়া হয়। ২০২৩ সালে বার্মিংহাম থেকে একমাত্র ড. এম জি মৌলা মিয়াই সম্মানজনক এ খেতাব লাভ করেন।
এমবিই হচ্ছে সম্মানসূচক ব্রিটিশ পদবি। রাজা ৫ম জর্জ ১৯১৭ সালে এ পদবীর প্রবর্তন করেন। খেতাব অর্জনকারীদেরকে রাজপ্রাসাদে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বার্মিংহাম প্যালেসে জমকালো সে অনুষ্ঠানে এবার থাকছেন রাজা তৃতীয় চার্লস। সে অনুযায়ী জমকালো ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন ড. এম জি মৌলা মিয়া।
বৃটেনে মূলধারার ব্রিটিশ বাংলাদেশী ব্যবসায়িক সংস্থা, বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ইউকেবিসিসিআই সভাপতি ড. এম জি মৌলা মিয়া বার্মিংহাম ও সলিহুল এর একজন সফল উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট এবং রাজনগর ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস গ্রুপের চেয়ারম্যান। এ গ্রুপের রয়েছে- রেস্টুরেন্ট, হোটেল, প্রোপার্টিজ এন্ড ইনভেস্টমেন্ট, এমবিএম এগ্রো ইন্ডার্স্টিজ, এমবিএম বিল্ডার্স মার্ট সুপারস্টোর, এমবিএম ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট এন্ড ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা এবং সাপ্তাহিক সুরমার ঢেউ পত্রিকা প্রকাশনা।
ড. এমজি মৌলা মিয়া যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশের সফল ব্যবসা গ্রুপ এবং মৌলা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। মৌলা ফাউন্ডেশন পারিবারিকভাবে পরিচালিত একটি চ্যারিটি সংস্থা। যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে এ সংস্থার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সলিহুল ও বার্মিংহামের মানুষের কাছে এম জি মৌলা মিয়ার রেস্টুরেন্ট স্বতন্ত্র ইমেজ তৈরি করে ব্যাপক সামাজিক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছে। ১৯৮৭ সাল থেকে রাজনগর ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস গ্রুপ স্বতন্ত্র ভূমিকার মাধ্যমে বাংলাদেশী কমিউনিটির কল্যাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ক্রিয়েটিভ ধারণা, নান্দনিক উপস্থাপনা এবং পরিবেশনার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে মূলধারায় বাংলাদেশী খাবারের স্বতন্ত্র পরিচিতি তুলে ধরতে ড. এমজি মৌলা মিয়ার অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ‘ডাইন বাংলাদেশী ক্যাম্পেইন’ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। যুক্তরাজ্যে ইন্ডিয়ান খাবার হিসেবে ব্যাপক পরিচিত বাংলাদেশী খাবারের স্বতন্ত্র পরিচিতি প্রতিষ্ঠিত করতে এ ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছিল। ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস এর বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে ড. এম জি মৌলা মিয়া একজন নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী। তিনি গিল্ড অব বাংলাদেশী রেস্টুরেটার্স এসোসিয়েশন, ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এ সংগঠন বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় দেখাশুনা করে থাকে। ড. এম জি মৌলা মিয়ার গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপ মিডিয়ায় ফলাওভাবে প্রচারিত হয়। বিশেষকরে হসপিটালিটি খাতে স্টাফ সংকটে এম জি মৌলা মিয়ার গৃহিত পদক্ষেপ পার্লামেন্টসহ দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।
তিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ ক্যাটালিস্টস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ইউকে-বিসিসিআই) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এটি মূলধারার একটি ব্রিটিশ বাংলাদেশী ব্যবসায়িক সংস্থা- যার সদর দপ্তর লন্ডনে অবস্থিত। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য কাজ করা এবং যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং দুইদেশের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করাই এ সংগঠনের উদ্দেশ্য। ড. এম জি মৌলা মিয়ার আজীবনের স্বপ্ন ছিল জাতীয় প্ল্যাটফর্মে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশীদের প্রতিনিধিত্বের জন্য নেতৃত্ব দেয়া এবং উদ্যোগ নেয়া। এ সংগঠনে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে তিনি তার সেই লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ পাচ্ছেন। সোশ্যাল ডাইভার্সিটি এবং কমিউনিটির পারষ্পরিক যোগাযোগ সম্পর্ক বৃদ্ধিতে ১৯৮০ সাল থেকে ড. এম জি মৌলা মিয়ার রেস্টুরেন্টসমূহ স্থানীয় কাউন্সিলের সাথে অত্যন্ত ঘণিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। দীর্ঘদিন এম জি মৌলা মিয়া প্রাচীনতম বাংলাদেশী কমিউনিটি সংগঠন বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে নতুন স্থায়ীভাবে বসবাস করতে আসা লোকদেরকে সহায়তা করতে ভূমিকা রেখেছেন। ড. এম জি মৌলা মিয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে জোরালো ভূমিকা রাখে। বিশেষকরে দাতব্যমূলক তৎপড়তা বিশেষ করে- সলিহুলে স্থানীয় স্কুলে সহায়তা, ওক্সফাম, পিহ্যাব, সিআরপি, শাইন, দ্যা আলজাইমার্স সোসাইটি, ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট, ফ্লাড রিলিফ এবং অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থসংগ্রহে ফান্ডরেইজিং ডিনার আয়োজনের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছেন। পরিবারিকভাবে পরিচালিত মৌলা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের কল্যাণে বিশেষ করে বন্যার্তদের সহায়তা, কোভিড-১৯সহ বিভিন্ন আপতকালীন সময়ে নিরলসভাবে কাজ করেছেন।
মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলাধীন বাহাদুরগঞ্জ গ্রামের মরহুম আলহাজ্ব মোস্তফা মিয়া ও ময়মুনা খাতুনের জৈষ্ঠপুত্র ড. এম জি মৌলা মিয়া দুই কন্যা ব্যারিস্টার সালিহা সুলতানা ও মাস্টার অব আর্টস, ফ্যাশন ডিজাইনার ফাবিহা সুলতানা এবং দুই পুত্র মাস্টার অব সাইন্স, ট্রেইনী চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট এট কেপিএমজি তৌসিফুর রহমান ও আন্ডার গ্রাজুয়েট ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্ট মুস্তাফিজুর রহমন এর গর্বিত জনক। তার স্ত্রী ফারহানা বেগম চৌধুরী। তার ৪ ভাই ও ১ বোন সবাই যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হয়েছেন।
এমবিই খেতাবে ভূষিত হবার প্রতিক্রিয়ায় ড. এম জি মৌলা মিয়া বলেন- এটা এক পরম প্রাপ্তি। এ প্রাপ্তি শুধু আমার নয়, সমগ্র বাংলাদেশী জাতির প্রাপ্তি। এ সম্মান শুধু একজন ব্যক্তির নয়; গোটা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা আরো সামাজিক ও মানবিক কাজে এগিয়ে আসতে উৎসাহী হবেন। আমি আমার ব্যবসা এবং পেশাগত জীবনে ইতিবাচক প্রভাব প্রতিষ্ঠায় সবসময় সচেতন রয়েছি। বাংলাদেশী কমিউনিটির মাঝে পারষ্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ণ এবং ব্রিটেনের মাল্টি কালচারাল সোসাইটির কল্যাণে প্রভাব বিস্তারমূলক কাজ করতে উৎসাহ বৃদ্ধিতে সক্রিয় ভূমিকা পালণ করছি। আমি ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য আমার ভূমিকা আরো জোরালো করবো এবং যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে আমার সমাজসেবামূলক কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *