শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়ায় নানা আয়োজনে গারোদের ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসব পালিত

শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়ায় নানা আয়োজনে গারোদের ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসব পালিত

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়া চা বাগানে নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসব। গারো সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, ‘মিশি সালজং’ বা শস্যদেবতার ওপর ভরসা রাখলে ফসলের ভালো ফলন হয়। দেবতাকে নতুন ফসলের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতি চেয়ে এ উৎসব পালন করেন তারা। এ উৎসবের মূল উদ্দেশ্য আগামী বছরে যেন ফসল ভালো হয়। তাদের সন্তান ও পরিবার-পরিজনরা যেন ভালো থাকে। উপজাতি নৃ-গোষ্ঠি গারোদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও কৃষ্টির অন্যতম উৎসব হলো ওয়ানগালা বা নবান্ন উৎসব। নানা আয়োজনে ফুলছড়া চা বাগান মাঠে শ্রীচুক আচিক আসং নকমা এসোসিয়েশন ও শ্রীচুক গারো যুব সংগঠনের আয়োজনে ২৬ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় থক্কা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে ওয়ানগালা অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। উৎসবের প্রথম পর্বে ক্রুশচত্বরে বাণী পাঠ, খামালকে খুথুব ও থক্কা প্রদান, জনগণকে থক্কা দেয়া, পবিত্র খ্রীষ্টযাগ, দান সংগ্রহ, আলোচনা সভা ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। মূলতঃ এ অনুষ্ঠানটি গারোদের হলেও খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীরা সেখানে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানাদি পরিচালনা করেন। ওই অনুষ্ঠানে সিলেট বিভাগ ক্যাথলিক মন্ডলীর প্রধান বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গোমেজসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে তাদের পুরোহিত জংসন ম্রি (খামাল) মোরগ কেটে এর ভিতরের খাদ্য নালি দেখে আগামী বছর কেমন যাবে এর ভবিষৎবাণী করেন। পুরোহিত মোরগের খাদ্যনালী দেখে বলেন, দেশ একটি দুঃসময় কাটিয়ে ভালো দিকে এগুচ্ছে। এবছর দেশে শস্য উৎপাদন ভালো হবে। মানুষের মেলবন্ধন সুদৃঢ় হবে। স্বামী-স্ত্রীর সু-সর্ম্পক গভীর হবে এতে সংসার জীবনে উন্নতি আসবে বলে জানান তিনি।
গারোদের মূল ধর্ম সাংসারেক এখন খৃষ্টানদের সাথে মিশে গেছে। ‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। দেবদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও মনোবাসনার নানা নিবেদন হয় এ উৎসবে। সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে, নতুন ফসল তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর আগে নতুন খাদ্যশস্য খাওয়া নিষেধ থাকে এ সম্প্রদায়ের জন্য। তাই অনেকেই একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলে থাকেন। ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি ছাড়াও আয়োজন করা হয় তাদের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গারো কিশোরীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী ‘ওয়ানগালা ওয়ানগালা’ গানের সাথে নৃত্য করে। এছাড়াও বিভিন্ন গারো লাইন থেকে আসা কিশোরীরা একের পর এক নৃত্য পরিবেশন করে।
ফুলছড়া চা বাগান মাঠে ওয়ানগালাটি মিলন মেলায় পরিণত হয়। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও ভাল ফসল লাভের আশায় পালন করা এ ওয়ানগালা উৎসবকে নিয়ে ছিল নানা বর্ণিল আয়োজন। তিনদিনব্যাপী আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও তা নানা কারনে একদিনেই পালিত হয়। এবছর তাদের আয়োজন ছিল ৬ষ্ঠ বারে মতো। অনুষ্ঠান শেষে সম্মাননা দেয়া হয় গারো সম্প্রদায়দের বিভিন্ন সফল কর্মে জড়িত ও অতিথিদেরকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *