শ. ই. সরকার জবলু :: মৌলভীবাজারে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে ৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার। এম. সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে। সকালে এম. সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ এবং বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বাদ জোহর মরহুমের পরিবারের আয়োজিত মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও শিরনি বিতরণে অংশগ্রহণ করে। মরহুমের পরিবারের আয়োজনে তার বাহামর্দান গ্রামের বাড়িতে সকাল থেকে কোরান খতম, বাদ জোহর মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও শিরনি বিতরণ করা হয়। বিকাল ৪টায় মৌলভীবাজার সদরের গিয়াসনগর ইউনিয়নস্থিত নিতেশ্বর গ্রামে মরহুমের পুত্র সাবেক এমপি ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র সভাপতি এম নাসের রহমানের মালিকানাধীন দুসাই রিসোর্ট এন্ড স্পা সংলগ্ন মাঠে এম সাইফুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের সভাপতি সৈয়দ তৌফিক আহমদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এড. আব্দুল মতিন চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন মরহুমের পুত্র সাবেক এমপি ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র সভাপতি এম নাসের রহমানসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এরপর মাগরিবের নামাজ শেষে, উপস্থিত সবাইকে দুসাই রিসোর্ট এন্ড স্পা হলরুমে আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে সন্ধা সাড়ে ৭টায় মৃত্যুবার্ষিকীর দিনব্যাপী কর্মসূচি সমাপ্ত হয়
মৌলভীবাজারের কৃতিসন্তান মরহুম এম সাইফুর রহমান ৬ অক্টোবর ১৯৩২ সালে মৌলভীবাজার সদরের বাহারমর্দান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মোঃ আব্দুল বাছির ও তালেবুন নেছার ৩ পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। মাত্র ৬ বছর বয়সে তার পিতার মৃত্যু হলে তার অভিভাবকক্ত গ্রহণ করেন চাচা মোহাম্মদ সফি। শিক্ষাজীবন, গ্রামের মক্তব ও পাঠশালা শেষ করে ১৯৪০ সালে তিনি জগৎসী গোপালকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৪৯ সালে মেট্রিকুলেশনে উর্ত্তীণ হন। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে আইকম পাস করে ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৫৩ সালে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডনে চলে যান। সেখানে পৌঁছার পর মত পাল্টে তিনি ব্যারিস্টারির পরিবর্তে চার্টার্ড একাউন্টেন্সী পড়েন। ১৯৫৩-৫৮ সাল পর্যন্ত পড়াশোনার পর ১৯৫৯ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ফেলোশিপ অর্জন করেন। এছাড়া তিনি আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষায়িত শিক্ষাগ্রহণ করেন। ১৫ জুলাই ১৯৬০ সালে তিনি পাকিস্তানী নাগরিক বেগম দূররে সামাদকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে তিনি ৩ পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের পিতা হন। তার স্ত্রী বেগম দূররে সামাদ রহমান ইন্তেকাল করেন ২০০৩ সালে। এর ৬ষ্ঠবছর ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সালে মৌলভীবাজার থেকে ঢাকায় যাবার পথে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় তিনি ইন্তেকাল করেন। শেষ ইচ্ছানুযায়ী তার জন্মস্থান বাহারমর্দান গ্রামের বাড়ীর পারিবারিক কবরস্থানে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হন।
মরহুম এম সাইফুর রহমান বিএনপি’র প্রতিষ্ঠালগ্নে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে রাজনীতিতে এসে আলোকিত করেছেন দেশকে, আলোকিত হয়েছেন নিজেও। ১৯৯৬ সালে ৬ষ্ঠ ও ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার- ৩ আসন, সিলেট- ১ আসন ও সিলেট- ৪ আসন থেকে এবং ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার- ৩ ও সিলেট- ১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৮ জুন ২০০৬ সালে তিনি সংসদে দ্বাদশ বাজেট পেশ করে দেশের সংসদীয় ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক বাজেট পেশকারীর রেকর্ড অর্জন করেন। তিনি প্রথমে দেশের অর্থমন্ত্রী এবং পরে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও, তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
মরহুম এম সাইফুর রহমান কর্মময় জীবনে স্বগুণে সব শ্রেণীপেশার মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। তার ব্যক্তিগত জীবন ছিলো খুবই সাদামাটা। একারণে যেকোন মানুষ তার কাছে ঘেষতে পারতো, কথা বলতে পারতো। চাওয়া পাওয়ার কোন অস্থিরতা ছিলনা তার কখনও। বিলাসিতাও তার পছন্দ করতেননা। কথা বলতেন সোজাসাপটা। এ কারণেই দেশ-বিদেশে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের কাছে ছিল তার বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা। দেশে-বিদেশে যেকোন এলাকায় যে কারও সাথে কথাবার্তায় এবং যেকোন সভা সমাবেশে তার বক্তব্যে থাকতো সিলেটি আঞ্চলিক ভাষার মিশ্রণ। এটা ছিলো তার কথাবার্তা ও বক্তব্যের একটি সহজাত বৈশিষ্ট। তিনি ছিলেন সিলেট বিভাগের উন্নয়নের রুপকার।