সুরমার ঢেউ সংবাদ :: জাল সনদে আইন পেশা চালানোর অভিযোগে হবিগঞ্জের পিপি এড. সিরাজুল হক চৌধুরীকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তিনি জাল সনদ দিয়ে ৭ বছর ধরে জেলার সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা (সরকারি কৌঁসুলি) পিপি পদে দায়িত্ব পালণ করে আসছিলেন। ৩০ আগষ্ট বুধবার বিকেলে তাকে এ পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। একইসাথে তার পরিবর্তে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান এপিপি (অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি) সালেহ উদ্দিন আহমেদকে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবুল মনসুর চৌধুরী বলেন- ‘সম্প্রতি সামনে আসা জাল সনদের বিষয়ে আমাদের সরাসরি কিছু করার সুযোগ নেই। তার সনদ জাল কি-না সেটিও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছেনা’। তিনি বলেন- ‘আমরা সনদ যাচাই করিনা। এটি যাচাই করে বার কাউন্সিল। সেখান থেকে নিবন্ধিত হবার পর আমাদের কাছে চিঠি দেয়া হয়। সে অনুযায়ী আমরা সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত করি।
জানা যায়- সিরাজুল হক চৌধুরীর দেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ পাস সনদে পাসের সন ১৯৮০ লেখা আছে। এতে উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদের স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ তিনি ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে নিয়োগ পান। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন ড. ফজলুল হালিম চৌধুরী। এছাড়া সনদে ওপরের বাম পাশে রোল নম্বর, ডানপাশে সিরিয়াল নম্বর রয়েছে- যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্রে ব্যবহার করা হয়না।
সিরাজুল হক চৌধুরী ১৯৮৫ সালে ঢাকা ল কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেছেন বলে সনদ দেন। কিন্তু, ঢাকা ল কলেজ সূত্রে জানা যায় এ সনদটিও জাল। কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী ও আইনজীবী সমিতির সাবেক নেতারা বলেন- ‘আমরা জানতে পেরেছি আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইং সিরাজুল হক চৌধুরীর সনদ জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত করছে। তবে, এখন কী পর্যায়ে আছে তা আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি।
আইন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব (জিপি/পিপি) মো. আব্দুছ ছালাম স্বাক্ষরিত এক পত্রে ৩০ আগষ্ট বুধবার সিরাজুল হক চৌধুরীর পিপি পদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়- জনস্বার্থে তার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন এপিপি (অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি) সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তাকে অনতিবিলম্বে মামলার নথিপত্রসহ যাবতীয় দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য সিরাজুল হক চৌধুরীকে নির্দেশ দেয়া হয়।
হবিগঞ্জ আদালতের কয়েকজন আইনজীবী জানান- সিরাজুল হক চৌধুরী জাল ও ভূয়া সনদে প্রায় ৩৪ বছর যাবৎ জেলা জজ কোর্টে আইন পেশা চালিয়ে আসছেন। ভূয়া সনদধারী আইনজীবী হয়েও ২০১৬ সালে তিনি পিপি হিসেবে নিয়োগ পান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিরাজুল হক চৌধুরী বলেন- ‘আমি অসুস্থ্য। কথা বলতে পারছিনা। তবে, আমার বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয়। আমার বিরুদ্ধে হবিগঞ্জে একটি এবং ঢাকায় একটি গ্রুপ কাজ করছে’। তিনি আরও বলেন- সরকার যখন যাকে খুশি এ পদে (পিপি) নিয়োগ দিতে পারে। আবার যখন খুশি বাদ দিতে পারে।