মোঃ ফারুক মিয়া, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) :: সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিমের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা। ১৮ জুন রোববার বেলা ১২টায় শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের আয়োজনে কলেজ রোডস্থ প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি দীপঙ্কর ভট্টাচার্য লিটন, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইমাম হোসেন সোহেল, কোষাধ্যক্ষ মোঃ এহসানুল হক (এহসান বিন মুজাহির), সহ-সম্পাদক (সাহিত্য ও প্রকাশনা) বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন এবং শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সদস্য লেখক, কলামিস্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান।
প্রতিবাদ সমাবেশে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী বলেন, অতীতে সাংবাদিক নির্যাতকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার করার কারণে দেশে সাংবাদিক নির্যাতন এবং নৃশংস হত্যার মতো ঘটনা বাড়ছে। সম্প্রতি জামালপুরে সাংবাদিক নাদিমকে নৃশংসভাবে প্রহার করে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য আসামিকে ইতোমধ্যে প্রশাসনকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু ক্ষোভের বিষয় হলো একজন হত্যার আসামিকে গ্রেফতারের পর হাতকড়া পড়ানো হয়নি, অথচ কিছুদিন আগে সাংবাদিককে গ্রেফতারের পর হাতকড়া পড়িয়ে কোর্টে তুলা হয়েছিল। এ দৃশ্যের মাধ্যমে সমাজে কিসের মেসেজ দেয়া হচ্ছে! হত্যাকাণ্ডে জড়িত সেই বাবু চেয়ারম্যান দুর্নীতি করে কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছেন, এখন তিনি সাংবাদিক হত্যার কাজে জড়িয়ে গেছেন। প্রেসক্লাবের এ সমাবেশ থেকে সাংবাদিক খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। পেশাগত কাজে সকল সাংবাদিকদের সুরক্ষা-নিরাপত্তা, সবধরণের সুযোগ-সুবিধা এবং সাংবাদিকতায় সবধরণের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবিও জানান তিনি সরকারের কাছে।
প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি দীপঙ্কর ভট্টাচার্য লিটন বলেন, দেশে সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার মতো ঘটনা নতুন নয়। এর আগে সাগর রুনিসহ বহু সাংবাদিককে হত্যা এবং নির্যাতন করা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে না। সাংবাদিক সাগর রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন ১০০ বার পিছিয়েছে। এভাবে সাংবাদিক নির্যাতনের বিচারের নামে প্রহসন চলছে।
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইমাম হোসেন সোহেল বলেন, দেশে ১৫ বছরে ২৩ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। গত ১৪ জুন পেশাগত কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফেরার পথে জামালপুরের বকশিগঞ্জের পাথাটিয়া এলাকায় দুর্বৃত্তরা সাংবাদিক গোলাম রাব্বানি নাদিমকে পিটিয়ে আহত করে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিন সদস্যরা ইতোমধ্যে প্রধান আসামিসহ আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছেন, এজন্য প্রশাসনকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে সাংবাদিক নাদিমের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান সরকারের কাছে।
শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ লেখক ও কলামিস্ট এহসান বিন মুজাহির বলেন, দেশে বর্তমান এবং অতীতেও সাংবাদিক নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। সাংবাদিকরা যখনই সাহস করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম চালিয়েছেন, তখন তাদের ওপর নির্যাতন, মামলা-হামলা এবং নৃশংসভাবে হত্যান শিকার হতে হয় দুর্বৃত্তদের হাতে। গত ১৪ জুন জামালপুরে আমাদের এক সহকর্মীকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্য করেছে দৃবৃত্তরা। তিনি বলেন সাগর রুনির মতো ৯৮ বার যেনো তদন্তের প্রতিবেদন পেছানো না হয়। বরং অনতিবিলম্বে খুনীদের এমন শাস্তি দেয়া হোক যাতে করে এ শাস্তি দেখে আগামীতে কেউ সাংবাদিক নির্যাতন বা হত্যাকান্ডের মতো বর্বর ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটাতে পারে। দেশে সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রীকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সহ-সম্পাদক (সাহিত্য ও প্রকাশনা) বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন বলেন, আমি যে পোর্টালে কাজ করি এ পোর্টালের জামালপুর প্রতিনিধি নাদিমকে হারিয়ে মনটা খুব ভারাক্রান্ত, ব্যথিত। এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছেন তিনি। বিশিষ্ট লেখক, কলামিস্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। কখনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী, কখনো বা প্রশাসন এসবের পেছনে থাকে। কিন্তু এগুলোর বিচার না হওয়া দেশে এমন নিপীড়নের ঘটনা ঘটতেই থাকে। সাংবাদিক নাদিম হত্যার ঘটনা প্রমাণ করে আমরা দেশে স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করার সুযোগ নেই। আর স্বাধীন সাংবাদিকতা না থাকলে দেশের চলমান গণতন্ত্র সুসংহত হবে না। যে কারণে দ্রুত সাংবাদিক হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
মানববন্ধন ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সহ-সম্পাদক (দপ্তর) এম. মুসলিম চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটির সদস্য নূর মোহাম্মদ সাগর, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সদস্য মিজানুর রহমান আলম, দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি মো: আব্দুশ শুক্কুর এবং দৈনিক বাংলা ৭১ এর শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি মো: আল আমিন।