সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অপহরণ ও ধর্ষিতা কিশোরী (১৭) কে উদ্ধারের পর মামলা না নিয়ে সালিশে নিষ্পত্তির নামে উল্টো ধর্ষণকারীকে অন্যত্র বিয়ের সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ উপ-পরিদর্শক রবিউল হক ও উপ-সহকারি পরিদর্শক তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। অথচ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এ ধরণের ঘটনার আপোষ-মীমাংসার কোন সুযোগ নেই। ধর্ষণে অন্তঃস্বত্তা কিশোরী ও তার মা হামিদা বেগম এখন ন্যায় বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে- ওই কিশোরীর বাড়ি উপজেলার নতুন সায়পুর গ্রামে। অপহারক যুবক জামিল আহমদ (২১) ওই গ্রামের জামাল উদ্দিনের পুত্র। ওই কিশোরী অপহরণের শিকার হয় ৭ মে রোববার। এরপর কিশোরীকে একাধিকবার ধর্ষণ করে ওই যুবক। ঘটনার এক সপ্তাহ পর মায়ের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৪ মে বৃহস্পতিবার কিশোরী ও অপহারক যুবককে উদ্ধার করেন শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের উপ সহকারি পরিদর্শক তাজুল ইসলাম। ওইদিন তাদেরকে আদালতে না তুলে রাতে তিনি তদন্ত কেন্দ্রে সমঝোতা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে স্থানীয় ইউপি মেম্বার মখসুদ আহমদ রানা ও নারী ইউপি মেম্বার নাসিমা বেগম উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ধর্ষিতা কিশোরীকে অপহারক ও ধর্ষণে অভিযুক্ত যুবকের সাথে বিয়ের সিদ্ধান্ত দিয়ে অভিযুক্ত যুবকের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে ১৫ মে শুক্রবার বিয়ের পরিবর্তে উল্টো নির্যাতনের শিকার হয়ে ওই কিশোরী তার বাবার বাড়িতে ফিরে যায়। এরপর কিশোরী বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে যান ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য। থানায় ধর্ষণ মামলার প্রস্তুতি নেয়ার খবর পেয়ে সেখান থেকে তাদের আপোষের কথা বলে ফিরিয়ে নেন এএসআই তাজুল ইসলাম। ঘটনাটি আপোষে শেষ করে দেবেন বলে তাদের ঘুরাতে থাকেন।
এরমধ্যে ওই যুবক অন্যত্র বিয়ে করে ফেলে। এ অবস্থায় ধর্ষণের শিকার কিশোরী পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে মাকে নিয়ে আদালতে মামলা করতে যায়। সেখানে আসামীদের দ্বারা মুহুরি প্রভাবিত হয়ে ধর্ষণ ও অপহরণের মামলার পরিবর্তে যৌতুক দাবী ও নারী নির্যাতনের মামলা লিখে দিয়েছে। কিশোরী না বুঝে এতে স্বাক্ষর করে। পুলিশ তদন্তে গেলে বিষয়টি ধরা পড়ে। এমন অভিযোগ অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার কিশোরী ও তার মায়ের। ভুক্তভোগী কিশোরীর মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়েকে অপহরণ করে ধর্ষণ করেছে জামিল। ফাঁড়িতে অভিযোগ দিলে তাজুল স্যার উদ্ধার করে মেয়েকে আমার কাছে না দিয়ে অপহরণ ও ধর্ষণকারীর সাথে পাঠিয়ে দেন। এরপর ঘটনা আপোষ হয়েছে জানিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলেন’। স্বাক্ষর না দেয়ায় তাকে ফাঁড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘তুমি কোনদিন ফাঁড়িতে আসবা না, আমার সামনেও পড়বা না’। অভিযোগের কপিটা চাইলে ওটাও দেননি। মৌলভীবাজারে নিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে গেলে আমার মেয়ে অন্তঃস্বত্তা বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। এখন মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায়। কোথাও কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।’
তদন্ত কেন্দ্রে ওই বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি মেম্বার মখসুদ আহমদ রানা ও মহিলা মেম্বার নাসিমা বেগম।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মখসুদ আহমদ রানা বলেন, ঘটনাটি আমি জানতাম না। তদন্ত কেন্দ্র থেকে আমাকে ফোন দিয়ে নেয়া হয়। এখানে (তদন্ত কেন্দ্রে) যা সিদ্ধান্ত হয়েছে পুলিশই নিয়েছে। আমরা কোন কথা বলিনি, শুধু উপস্থিত ছিলাম। মহিলা মেম্বার নাসিমা বেগম বলেন, ‘পুলিশ উভয়পক্ষের সাথে কি কথা বলেছে ওটা আমরা শুনিনি। আমি পাশের রুমে ছিলাম। আলোচনা শেষে শুধু জানানো হয় মেয়ে-ছেলের বিয়ে হবে।
বিয়ে যেদিন হবার কথা ছিল সেদিন বিয়ে হয়নি। শুনেছি আগের রাতে মেয়েকে নির্যাতন করা হয়েছে। তাই মেয়েটি কৌশলে পালিয়ে মায়ের কাছে চলে যায়।’ অভিযোগের বিষয়ে শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মৌলভীবাজারে কোর্টে স্বাক্ষী দিতে গিয়েছি। কিশোরীর ঘটনাটি আই.সি স্যার সমাধান করে দিয়েছেন। তার বক্তব্য নেন।’ শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ রবিউল হক বলেন, ‘মেয়ে ও ছেলের অভিভাবকরা বিয়ে দেয়ার সমঝোতা করায় পুলিশ আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়নি। পরে মোহরানা নিয়ে ঝামেলা হয় বলে তিনি শুনেছেন।’