সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নস্থিত কালারায়ের চর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মস্তই মিয়া, তার স্ত্রী শেফালী বেগম ও নাতি আদিল মিয়া মিলে প্রতিবেশী এক অসহায় নারীকে তারই বাড়ীতে ঢুকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। আক্রান্ত ওই নারীর অসহায় আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলেও, এলাকায় অত্যাচারী হিসাবে পরিচিত এ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভয়ে কেউ বাঁধা দেয়ার বা প্রতিহত করার সাহস পায়নি। তাদের নির্দয় প্রহারে ওই নারীর যৌনাঙ্গে রক্তক্ষরণ হতে থাকলেও তারা প্রহার অব্যাহত রাখে। এমতাবস্থায় নারীটি ধরাশায়ী হয়ে পড়লে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে, লোকজন তাকে উদ্ধার করে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। আজ ৪ মার্চ এ সংবাদ পরিবেশন পর্যন্ত সে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মুঠোফোনে আলেকজান বেগম জানায়- আমি এ ঘটনার বিচার চেয়ে মামলা করতে চাই। কিন্তু, চেয়ারম্যান আমাকে মামলা করতে নিষেধ করেন।
এদিকে, আলেকজান বেগম কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্ত্তি হবার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা মস্তই মিয়া এলাকায় দম্ভোক্তি করে বেড়াচ্ছে- মুক্তিযোদ্ধা কাউকে পেটালে তার কোন বিচার নেই। থানা-পুলিশ, কোর্ট-কাচারি কোথায়ও মুক্তিযোদ্ধার কোন বিচার হয়না। কাজেই আলেকজান বেগম যেন ভালোয় ভালোয় নিরব থাকে। তা নাহলে অবস্থা খুব খারাপ হবে। অত্যাচারী মুক্তিযোদ্ধা মস্তই মিয়া পরিবারের ভয়ে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয় একাধিক সূত্র ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
শরিফপুর ইউপি’র ওই এলাকার মেম্বার লাল মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন- এরা এলাকায় অত্যাচারী হিসাবে পরিচিত। এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন আমাকে ঘটনা জানালে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বচক্ষে দেখেছি। আমাকেও তারা উপেক্ষা করেছে। নারীটি একতরফাভাবে অমানষিক মার খেয়েছে। আমিই তাকে হাসপাতালে পাঠাই। পরবর্তীতেও তার চিকিৎসার খোজখবর নেই এবং জানতে পারি অর্থাভাবে সে ঠিকমতো চিকৎসা নিতে পারছেনা।
যেহেতু স্থানীয় একাধিক সূত্র ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে, সেহেতু এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা মস্তই মিয়া, তার স্ত্রী শেফালী বেগম ও নাতি আদিল মিয়ার বক্তব্য জানার প্রয়োজন না থাকা সত্তেও তাদের বক্তব্য জানার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু, যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
১১নং শরিফপুর ইউপি’র চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান- এরা এলাকায় অত্যাচারী হিসাবে পরিচিত। এদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতীষ্ট হয়ে উঠেছে। এলাকার লোকজন ও স্থানীয় মেম্বারের কাছ থেকে জেনেছি এরা আলেকজানকে অমানষিক মারপিট করেছে। আমি এও জেনেছি- আলেকজান হাসপাতালে ভর্ত্তি হবার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা মস্তই মিয়া এলাকায় দম্ভোক্তি করে বেড়াচ্ছে- মুক্তিযোদ্ধা কাউকে পেটালে তার কোন বিচার নেই। থানা-পুলিশ, কোর্ট-কাচারি কোথায়ও মুক্তিযোদ্ধার কোন বিচার হয়না। আলেকজান যেন ভালোয় ভালোয় নিরব থাকে। তা নাহলে অবস্থা খুব খারাপ হবে। মামলা করতে নিষেধ করা প্রসঙ্গে তিনি জানান- ভূক্তভোগী নারীটি হতদরিদ্র হওয়ায় আমি উভয়পক্ষকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে বসে ঘটনাটির সম্মানজনক মিমাংসা করে দিতে চেয়েছিলাম। সে লক্ষ্যে আমি মুক্তিযোদ্ধা মস্তই মিয়াকে ডেকেছিলাম। কিন্তু, সে তা আমলেই নেয়নি। পরে আমি আলেকজানকে একথা জানিয়ে দিয়ে বলেছি- তুমি আইনের আশ্রয় নিতে পারো। আমি তোমাকে সম্ভব সবরকম সহযোগীতা করবো।