সিলেটের খাদিমপাড়া ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি ৬ বছরেও পূর্ণতা পায়নি

সিলেটের খাদিমপাড়া ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি ৬ বছরেও পূর্ণতা পায়নি

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: সিলেটের খাদিমপাড়া ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি ৬ বছরেও পূর্ণতা পায়নি। ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটি সিলেট সদর উপজেলার একমাত্র সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র। সিলেট বিভাগের কোটি জনতার চিকিৎসার ভরসাস্থল সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর চাপ কমাতে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটি এখনো পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমে যেতে পারছেনা। হাসপাতালটিতে রোগ নির্ণয়ের কোনো যন্ত্রপাতি নেই, টেকনিশিয়ানও নেই, এমনকি ওষুধও নেই। অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও নেই চালক। চিকিৎসক, সেবিকাসহ পর্যাপ্ত জনবল সংকটের কারণে থমকে আছে বহুল প্রত্যাশিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা। ফলে, এখানকার রোগীদের ঘুরেফিরে ওসমানী হাসপাতালেই যেতে হচ্ছে। উপজেলাবাসীর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে খাদিমনগরে হাসপাতাল নির্মিত হলেও এর সুফল পাচ্ছেন না উপজেলার বাসিন্দারা।
জানা গেছে- ২০১৬ সালে সিলেট সদর উপজেলার খাদিমে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় খাদিমপাড়া ৩১ শয্যা হাসপাতাল। এরপর পেরিয়ে গেছে ৬ বছর। এখন পর্যন্ত সেখানে শুরু হয়নি পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম। ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকার মানুষজন। উদ্বোধনের ৬ বছরেও হাসপাতালে শুরু হয়নি ইনডোর সেবা কার্যক্রম। রোগী ভর্তির জন্য আর্থিক আর প্রশাসনিক অনুমোদনও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয়দের অভিযোগ- হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে গেলেই বিভিন্ন টেস্ট লিখে দেন। সেখানে রক্ত পরীক্ষাও করানো যায়না, কোনো ওষুধও পাওয়া যায়না। এসবের জন্য তাদেরকে শহরে যেতে হয়। আবার অনেক সময় চিকিৎসকও পাওয়া যায়না। হাসপাতাল বলা হলেও এটি আসলে অনেকটা ডাক্তারের চেম্বারের মতো। এখানে একটু কম পয়সায় ডাক্তার দেখানো যায়- এটুকুই লাভ। আর কোনো সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট কর্তৃপক্ষ বলছে, খাদিমপাড়া ৩১ শয্যা হাসপাতালটি জেলা বা উপজেলা হাসপাতালের মতো নয়। এটি বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষায়িত হাসপাতালের জন্য আলাদা আর্থিক ও প্রশাসনিক অনুমোদন প্রয়োজন। তবে, নানা জটিলতায় তা এখনও সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- রাজনৈতিক বিবেচনায় হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়েছিল। নির্মাণের আগে অবকাঠামো ছাড়া আর কিছু করার চিন্তা করা হয়নি। কিন্তু হাসপাতালের জন্য আরও অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। এসবের কিছুই এখানে নেই। এখানে তেমন ওষুধপত্র নেই। আলট্রাসনোগ্রাম ছাড়া রোগ নির্ণয়ের আর কোনো যন্ত্র নেই। এখন আলট্রাসনোগ্রামও বন্ধ। এমনকি রক্ত পরীক্ষাও করা যায় না। টেকনোলজিস্ট ও রেজিওলজিস্টের পদও শূন্য। অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক নেই। ফলে এটি ব্যবহার করা যায় না। অবকাঠামোগত সুবিধা এবং চিকিৎসক থাকার পরও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র না থাকায় এখানে অনেক রোগীই ভর্তি হতে চায় না। মাঝে মাঝে দু-একজন ভর্তি হলেও তারা পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা পায়না। ফলে তাদেরকে সেখান থেকে ওসমানীসহ অন্যান্য হাসপাতালে স্থানান্তর হতে হয়।
জানা গেছে- করোনাকালীন আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ঘোষণা করে এই হাসপাতালে করোনার উপসর্গ থাকা ও আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি করা হয়। করোনার প্রকোপ কমার পর বন্ধ হয়ে যায় ইনডোরের কার্যক্রম। হাসপাতালটিতে তত্ত্বাবধায়কসহ চিকিৎসকের পদ আছে ১০টি। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ৬ জন। এরমধ্যে ২ জন মেডিকেল অফিসার, ৩ জন কনসালটেন্ট ও ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আছেন ডা. আব্দুল হারিছ।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন- লোকবল সংকট ও অর্থ ছাড় না পাওয়ায় হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছেনা। চিকিৎসক নার্সের পাশাপাশি এখানে সব পদেই লোক সংকট রয়েছে। এখন পর্যন্ত হাসপাতালে কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়নি। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে ইনডোরেও কিছু রোগী ভর্তি থাকেন। তবে, বহির্বিভাগের কার্যক্রম বেলা ১টায় বন্ধ হয়ে যায়। ভর্তি রোগী না থাকলে তখন হাসপাতালের ফটকও বন্ধ করে দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে সদ্য বিদায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানান- খাদিমপাড়া হাসপাতালটি নির্মাণের সময়ই পিছিয়ে পড়ে গেছে। কেবল ভবন নির্মাণ করলেই স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের জন্য অর্থছাড় ও লোকবলের অনুমোদন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি নিজেও একাধিকবার এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদা জানিয়ে চিঠি প্রেরণ করেছি। বিগত করোনা মহামারীর সময় হাসপাতালটি করোনা ডেটিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে প্রচুর লোককে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে।
তিনি বলেন- খাদিমপাড়া হাসপাতালকে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে চালু রাখা উচিত। এজন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, জনবল ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র নিশ্চিত করতে হবে। এরপরও কিছু সংখ্যক মানুষ এ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। হাসপাতালের ইনডোর কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। এজন্য অর্থ ছাড়, লোকবল নিয়োগ প্রয়োজন। এছাড়া ইনডোরে ভর্তি রোগীর খাবারের জন্যও অর্থ প্রয়োজন। এসব না পাওয়ায় ইনডোর কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় সহকারী পরিচালক ডা. নূরে আলম মো. শামীম বলেন- হাসপাতালটির ব্যাপারে উর্ধ্বতন মহলে একাধিক চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জনবলসহ অন্যান্য সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *