সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে চালু হয়েছে শিশু হৃদরোগ ইউনিট

সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে চালু হয়েছে শিশু হৃদরোগ ইউনিট

সুরমার ঢেউ :: সিলেট বিভাগের মধ্যে সর্বপ্রথম সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু হয়েছে হার্ট ফেইলিওর কর্ণার ও শিশু হৃদরোগ ইউনিট। হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া ও হৃদরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মোখলেছুর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শিশুদের জন্য উপকারী ইউনিটটি চালু হয়েছে। এক্ষেত্রে বেশি উপকৃত হবে গরীব ও অসহায় রোগীরা।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক জানান- হার্ট ফেইলিওর বা হার্ট ফেল একটি জটিল সমস্যা- যেখানে হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা ব্যাপকভাবে কমে যায়। যার ফলে হার্ট শরীরের বাকি অংশে যথেষ্ট পরিমানে রক্ত সরবরাহ করতে পারেনা। অবিলম্বে চিকিৎসা না হলে যার কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বিশ্বে হার্ট ফেইলিওর এর রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। সারাবিশ্বে সাড়ে ৬ কোটি মানুষ হার্ট ফেইলিওর এ আক্রান্ত। বাংলাদেশেও এ রোগীর সংখ্যা অনেক বেশী। হার্ট ফেইলিওর এর চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। ঘনঘন হাসপাতালে ভর্তি হবার কারনে চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মোখলেছুর রহমান জানান- হার্ট ফেইলিওর কর্ণার হচ্ছে বহির্বিভাগে হার্ট ফেইলিওর রোগীদের ফলোআপ করা এবং যেসব রোগীদের হার্ট ফেইলিওর এর ঝুঁকি রয়েছে তাদের চিহ্নিত করে হার্ট ফেইলিওর নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করা এবং আন্তঃবিভাগে কর্নার করে আলাদাভাবে হার্ট ফেইলিওর এর চিকিৎসা প্রদান। এতে হার্ট ফেইলিওর রোগীদের নিয়মিত ফলোআপ করে তাদের ঔষধের মাত্রা ঠিক করা হবে। এছাড়া যেসব কারণে হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি বাড়ে যেমন- রক্তশুন্যতা, রক্তে লবন কমে যাওয়া, ইনফেকশন ইত্যাদি নির্ণয় করে চিকিৎসা দেয়া হবে।
তিনি জানান- হার্টের সার্জারীসহ চিকিৎসা সিলেটে সম্ভব নয়। এখানে হার্টের বাইপাস সার্জারী, ভাল্ব বদলানো, জন্মগত হৃদরোগের সার্জারী ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক এবং সময়মতো পরামর্শ দেয়া হবে। এতে ঘনঘন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কমানো সম্ভব। এছাড়া আন্তঃবিভাগে হার্ট ফেইলিওর ইউনিট চালুর কারণে আলাদাভাবে গুরুত্ব সহকারে হার্ট ফেইলিওর এর রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাবে। হার্ট ফেইলিওর কর্নার এর কারণে ব্যক্তিগত চিকিৎসা ব্যয়ের পাশাপাশি রাষ্ট্রের চিকিৎসা ব্যয়ও বহুলাংশে কমে যাবে। সিলেটে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশু রোগী সবসময় পাওয়া যাচ্ছে এবং প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে। শিশু হৃদরোগ যেমন জটিল তেমনি তার চিকিৎসা ও রোগ ব্যবস্থাপনাও ব্যয়বহুল। গরীব রোগীদের পক্ষে এ চিকিৎসা ব্যয় বহন করা কঠিন। হাসপাতালে শিশু হৃদরোগীদের জন্য আলাদা কোন ওয়ার্ড না থাকায় রোগীদেরকে বিচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এই প্রথম ওসমানী হাসপাতালের ১৬নং ওয়ার্ডে ১০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হৃদরোগ ইউনিট চালু হয়েছে- যেখানে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুরা একটি নির্দিষ্ট স্থানে এসে চিকিৎসা নিতে পারবে। এখানে রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি চিকিৎসা প্রদান করা হবে। এছাড়া জটিল রোগী হলে ঢাকায় চিকিৎসার ব্যাপারে সঠিক পরামর্শ দেয়া যাবে। এছাড়া দেশের মধ্যে অনেক সংস্থা আছে যারা বিনা খরচে শিশু রোগীদের অপারেশনের ব্যবস্থা করে থাকে। কিন্তু জানার অভাবে সে সুযোগ থেকে রোগীরা বঞ্চিত হন। শিশু হৃদরোগ ইউনিট সে সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করে শিশু হৃদরোগীদের বিনা খরচে অপারেশনের ব্যবস্থা করবে। এছাড়া গর্ভকালীন সময়ে অপুষ্টি, রক্তশূন্যতা, ডায়াবেটিস, অপ্রয়োজনীয় ঔষধ খাওয়া, রুবেলা টিকা গ্রহনসহ গর্ভকালীন সঠিকভাবে নিজের যত্ন নেয়ার ব্যপারে পরামর্শ দিয়ে শিশু হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *