রাজনীতি করতে পারবেননা এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা

রাজনীতি করতে পারবেননা এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা

সুরমার ঢেউ :: এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আর রাজনীতি করতে পারবেননা। এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধে জেলা প্রশাসকদের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে সরকার। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথমদিনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধের প্রস্তাব আসে। সরকারি কর্মচারীর মতো শিক্ষকদের জন্য একটি বিধিমালা করার এ প্রস্তাব দিয়ে ঝিনাইদহের ডিসি মনিরা বেগম প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবার সুযোগ রয়েছে। এতে পাঠদান কার্যক্রমে তাদের দায়সারা আচরণ দেখা যায়। বিধিমালা হলে শিক্ষকতার পাশাপাশি ঠিকাদারি, সাংবাদিকতাসহ একাধিক পেশায় যুক্ত থাকার প্রবণতা ঠেকিয়ে শিক্ষকদের পাঠদানে আন্তরিক করা যাবে। বিধিমালা বা নীতিমালা থাকলে শিক্ষকতা পেশায় থেকে রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণে নিরুৎসাহিত করাও সম্ভব।
জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন- ‘আমাদের বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। তাদের জন্য একটি আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব এসেছে। আমরা মনে করি, এটি একটি ভালো প্রস্তাব। এর জন্য নীতিমালা করা যেতে পারে।
বর্তমানে দেশের প্রায় ৯৫ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বেসরকারি। বর্তমানে সারাদেশে শুধু মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অধীন ২০ হাজার ২৭৭টি এমপিওভুক্ত স্কুল ও কলেজ আছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬০৮ জন। বর্তমানে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের এখন মূল বেতনের সঙ্গে কিছু ভাতা দেয়া হয়। উৎসব ভাতাও পান । তবে তারা সরাসরি রাজনীতি করার সুযোগ পান। অনেক শিক্ষক সরাসরি রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। অনেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে দুটি কর্মই করে যাচ্ছেন। ফলে, এ শিক্ষকরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে থাকেন। এ সুযোগ বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসকরা। নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নামে স্বতন্ত্র একটি অধিদপ্তর করার প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব কার্যক্রম মাউশির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাই, মাউশির কাজের চাপ বেশি থাকে। কাজের পরিমাণ বেশি থাকায় মাউশির সব কার্যক্রম বাস্তবায়নে সমস্যা হয়। পৃথক অধিদপ্তর হলে সেবা প্রদান ও মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম পরিবীক্ষণ করা সহজতর হবে।
এছাড়া পাঠ্যপুস্তকে ট্রাফিক আইন বা সড়ক পরিবহন আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা, কক্সবাজারে বিশেষায়িত মেরিন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, শিক্ষার্থী কম এমন বিদ্যালয় বিলুপ্ত করে এর পাশের বিদ্যালয়ের সঙ্গে একত্রীকরণ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে পোষ্য কোটা বাতিল, স্কুল ফিডিং প্রকল্প গ্রহণসহ প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কে আলাদা আলাদা প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন- তারা শিক্ষাবিষয়ক একটি পূর্ণকালীন টেলিভিশনের কথা বলেছেন। এটি খুবই যৌক্তিক দাবি। ‘তারা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষাকে আলাদা করার কথা বলেছেন। আমার মনে হয়, অনেক বেশি ভাগ করলে সেই সমন্বয়টা বরং কমতে পারে। কাজেই বিষয়টি নিয়ে আমাদের আরো ভেবে দেখতে হবে’। তিনি জানান- হাওরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির সময়টি ভিন্ন করার প্রস্তাব এসেছে। আমরা এটি নিয়ে আগে থেকেই কাজ করছি। একটি ফ্লেক্সিবল ক্যালেন্ডার তৈরি করা দরকার। কারণ, আমাদের দেশের কয়েকটি অঞ্চলে একটি ভিন্ন সময়ে বন্যা হয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন- অনেকগুলো প্রস্তাব এসেছে, যেগুলো এরই মধ্যে বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। যেমন কারিগরিতে বয়সের বাধা তুলে দেয়া ও নবম-দশম শ্রেণিতে কারিগরি কোর্স নিয়ে আসা। এগুলো আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমে আছে। আমরা ৬৪০টি বিদ্যালয়ে এ দুটি কোর্স বাধ্যতামূলক করেছি। বয়সের বাধা আগেই তুলে দিয়েছি। আর, কক্সবাজারে একটি মেরিন বিশ্ববিদ্যালয় করা যায় কি না; প্রতি উপজেলায় একটি করে কারিগরি স্কুল ও কলেজ করারও প্রস্তাব এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *