শান্তিগঞ্জে পানির অভাবে চাষকৃত জমি ফেটে চৌচির

শান্তিগঞ্জে পানির অভাবে চাষকৃত জমি ফেটে চৌচির

সুরমার ঢেউ :: সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলায় পানির অভাবে চাষকৃত জমি ফেটে চৌচির। উপজেলার শিমুলবাঁক ইউনিয়নের পাঙ্গাসিয়া হাওরের উঁচু এলাকায় সেচের পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পানির অভাবে সেচ দিতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে, অনাবাদি রয়েছে বেশ কিছু জমি। অনেক জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। মৌসুমের শুরুতেই সেচের পানির সঙ্কটে দিশেহারা আমড়িয়া, কান্দাগাঁও, রুপাবালি, খিদিরপুরসহ ৪ গ্রামের কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, হাওরের পানি ধারণের অন্যতম জলাশয় ভান্ডা হাজিরা বিলের ছাতল জলমহালটি অসময়ে শুকিয়ে মৎস্য আহরণ করায় পানি সেচের কৃত্রিম এই সংকট দেখা দিয়েছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল প্রভাব বিস্তার করে স্থানীয় মৎস্যজীবী সমিতির নাম ব্যবহার করে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধ পন্থায় জলমহাল শাসন করায় সাধারণ কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে পাঙ্গাসিয়া হাওরে গেলে দেখা যায়, পাঙ্গাসিয়া হাওরে আমড়িয়া, কান্দাগাঁও, রুপাবালি, খিদিরপুরের উঁচু এলাকার বেশ কিছু জমি পানির অভাবে অনাবাদি রয়েছে। যেসকল জমি চাষের আওতায় এসেছে সেগুলোতে পানির অভাবে সেচ দিতে পারছেন না কৃষকরা। চারা রোপণের পরে সেচ না দেয়ায় অনেক জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। বিকল্প সেচের ব্যবস্থা না থাকায় দুশ্চিন্তায় স্থানীয় কৃষকরা। কৃষকরা জানান, হাওরের উঁচু অংশে জমিতে সেচ দিতে পঞ্চায়েতের টাকায় বাঁধ তৈরী করে ভান্ডা হাজিরা বিলের ছাতল জলমহালে পানি আটকানো হয় যাতে সময়মতো পানি সেচ দিতে পারেন কৃষকরা। দীর্ঘদিন যাবত এমনিভাবে সেচের ব্যবস্থা করে আসছেন এলাকাবাসী। কিন্তু চলতি মৌসুমে বিলের ইজারদার অধিক মুনাফা লাভে কার্তিক মাসের শুরুতেই বিলের পানি সেচে মাছ ধরতে শুরু করে। ফলে, হাওরের উঁচু অংশের পানি শুকিয়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে ছাতল বিলে পানির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আমড়িয়া গ্রামের কৃষক বলেন, বনছাতল বিলের পানি শুকিয়ে মাছ ধরার কারণে হাওর শুকিয়ে গেছে। আমি ৫ কেয়ার জমি চাষাবাদ করতে পারিনি। জমি না করায় সামনের দিনগুলি অভাবে থাকতে হবে। আফাজ উদ্দিন বলেন, আমাদের বাপদাদার আমল থেকে ছাতল বিলের পানি দিয়ে হাওরের জমি চাষাবাদ করে আসছি। এবার বিলের মালিকরা কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসেই বিলের পানি ছেড়ে দিছেন। এখন পানির অভাবে বেশ কিছু জমি অনাবাদি থাকবে। ইউপি সদস্য ফয়জুর রহমান বলেন, এই হাওরে উঁচু অংশ বনছাতল বিলের পানি ও নিচু অংশ পাঙ্গাসিয়া খারার পানি দিয়ে চাষাবাদ করেন। পাঙ্গাসিয়া খারায় পানি থাকলেও বন ছাতলে কোনো পানি নেই। এর জন্য বিলের ইজারাদারই দায়ী। বিল শুকিয়ে মাছ ধরার ব্যাপারে জাহির আলী বলেন, বিল আমি আমড়িয়া কান্দাগাঁও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির কাছ থেকে কিনে নিয়ে এনেছি। আমি কেবল মাছ ধরেছি, পানি শুকাইনি। বিলের পানি কৃষকরা তুলে নিয়ে গেছেন।
কৃষি অফিসার জাহিদ হাসান বলেন, বনছাতল বিল শুকিয়ে মাছ ধরার কারণে হাওরের উঁচু এলাকায় তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এ বিষয় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলছেন বলে জানান তিনি। শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার উজ্জামান বলেন, পাঙ্গাসিয়া হাওরে নিচু অংশে পানি রয়েছে সেখানে সেচ সমস্যা নেই। তবে, উঁচু অংশের সেচ সমস্যার নিরসনে বিকল্প ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *