কমলগঞ্জে সাঁওতালদের ঐতিহ্যবাহী ‘সোহরাই’ উৎসব অনুষ্ঠিত

কমলগঞ্জে সাঁওতালদের ঐতিহ্যবাহী ‘সোহরাই’ উৎসব অনুষ্ঠিত

সুরমার ঢেউ :: মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পারুয়াবিল সাঁওতাল পল্লীর মাঠে মণিপুরি ললিতকলা একাডেমির আয়োজনে সাঁওতাল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী সোহরাই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৩ জানুয়ারি সোমবার। অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মণিপুরি ললিতকলা একাডেমির উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সিফাত উদ্দিন।একাডেমির গবেষণা কর্মকর্তা প্রভাস চন্দ্র সিংহের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মণিপুরি সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনন্দ মোহন সিনহা, মণিপুরি ললিতকলা একাডেমির নির্বাহী সদস্য, লেখক ও গবেষক আহমেদ সিরাজ, শিক্ষিকা অঞ্জনা সিনহা, গবেষক প্রভাষক দীপঙ্কর শীল, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি বিশ্বজিত রায়। উৎসবকে ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন পল্লী থেকে চারটি আদিবাসী নৃত্য দলের অংশগ্রহণে ক্ষুদ্র ও নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির গান ও নাচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ঢাক মাদলের তালে নিজস্ব সংস্কৃতির নৃত্য উপভোগ করতে অনুষ্ঠানস্থলে ছুটে আসেন হাজারো মানুষ। এতে করে মিলনমেলা বসে ক্ষুদ্র ও নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মাঝে। মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আমেজ।
জানা যায়- বাংলাদেশে বসবাসরত সাঁওতালদের রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত নিজস্ব আচার, উৎসব ও সংস্কৃতি। জীবন সমস্যা ও শত কষ্টেও তারা উৎসব – আচার, অনুষ্ঠান রীতি প্রথা সংস্কৃতিগুলোকে ধরে রেখেছে। দারিদ্রতার চাপে সাঁওতাল সংস্কৃতি আজ প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। তবু এরা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উৎসবগুলোকে। মাদলের বাদ্যি আর সাঁওতাল নৃত্যে নিজেকে খোঁজার আনন্দ সত্যি অনন্য। উৎসবে আনন্দ উল্লাসের জোয়ারে তাই ভেসে যায় সাঁওতালদের কষ্টগুলো।
উৎসবটি মূলত ধনসম্পত্তি ও গরু-বাছুর বৃদ্ধির জন্য পালন করা হয়। প্রতিবছর পৌষ মাসে সাঁওতাল গ্রামগুলোতে সোহরাই উৎসবের আয়োজন চলে। সোহরাই উৎসব উপলক্ষ্যে বিবাহিতা নারীরা বাবার বাড়ি আসার সুযোগ পায়। ফলে, সাঁওতাল নারীরা সারাবছর অপেক্ষায় থাকে উৎসবটির জন্য। তবে, সোহরাই উৎসবের কোন নির্ধারিত দিন বা তারিখ নেই। পৌষ মাসে, সাঁওতাল গোত্র প্রধানের উপস্থিতিতে উৎসবের একটি দিন নির্ধারণ করে। সেই নির্ধারিত দিন থেকে পরবর্তী ৭ দিনব্যাপী চলে এই সোহরাই উৎসব। সাঁওতাল পল্লীর এনজিও কর্মী জেমস সরেন বলেন, দারিদ্রতার কারণে আমরা পড়াশোনা তেমন সম্ভব হয়ে উঠে না। তারই মাঝে কোনভাবে সাংস্কৃতিককে বিভিন্ন আয়োজনে পালন করে থাকি। সোহরাই উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন সাঁওতাল গ্রাম থেকে আগত যুবকরা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যগত হাতিয়ার নিয়ে তীর ধনুক প্রতিযোগিতা করা হয়। এই উৎসবের একটি রীতি হচ্ছে সাঁওতাল মেয়েরা তাদের বাপের বাড়ি যাওয়ার নিমন্ত্রণ পায়। তারা নানা রকমের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নেচে গেয়ে এই দিনটি পালন করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *