সুরমার ঢেউ সংবাদ :: বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ’র সভাপতি মাওলানা হুশামুদ্দিন চৌধুরী ফুলতলীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা কারিকুলাম ও শিক্ষা ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। স্কুল ও মাদ্রাসার বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে মুসলিম সভ্যতার গৌরব না থাকার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, এনসিটিবি ও বিশেষজ্ঞ আলিম-উলামার সমন্বয়ে মাদরাসার জন্য অবশ্যই স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা এবং অনতিবিলম্বে একটি সমন্বিত কমিটি গঠন করে এ কাজ শুরু করা প্রয়োজন বলে দাবি জানান। প্রতিনিধি দল ১২ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচরাইটার এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
প্রতিনিধি দল নিয়ে প্রায় ঘন্টাব্যাপী বৈঠকে মাওলানা হুশামুদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী মাদরাসার জন্য স্বতন্ত্র কারিকুলাম প্রণয়ন, মাদরাসার মূল পাঁচটি বিষয় (কুরআন, হাদীস, আরবি ১ম পত্র, আরবি ২য় পত্র এবং আকাইদ ও ফিকহ) ঠিক রেখে সাধারণ বিষয়সমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ১০টি বিষয়ে ১০০০ নম্বর নির্ধারণ করা, স্বকীয়তা রক্ষা,
মাদরাসার জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের পূর্ব পর্যন্ত গত বছরের পাঠ্যপুস্তক পাঠদানের অনুমতি প্রদান করা, পাঠ্যপুস্তক সংশোধনসহ বিবিধ দাবি উপস্থাপন করেন।
প্রতিনিধি দল দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের বিশ^াস, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির আলোকে জাতীয় শিক্ষাক্রম তথা স্কুলের শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও পরিমার্জন করা, এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ আলিম-উলামার সমন্বয়ে উক্ত কার্যাবলি কাজ সম্পাদন করা- যাতে ইসলামী বিশ্বাস ও আদর্শবিরোধী এবং সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের জীবনাচারের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো বিষয় স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত না হয়, স্কুল ও মাদরাসার পাঠ্যপুস্তক থেকে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী বিবর্তনবাদসহ বিতর্কিত ও আপত্তিকর সকল বিষয় বাদ দেয়া, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের নতুন বইগুলো বাদ দিয়ে বিজ্ঞ আলিম-উলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদ সমন্বয়ে পুনর্লিখন করে প্রকাশ করা এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ মুসলমান বিধায় মুসলিম সভ্যতা ও ইসলামী আদর্শের বর্ণনাকে এক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়া, বিভিন্ন সভ্যতার দেব-দেবীরা কে কোন কর্মের তা বইয়ে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তা সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম শিক্ষার্থীর মন-মানসকে বিভ্রান্ত করবে বিধায় এগুলো বাদ দেয়া, শিক্ষার্থী মূলায়নে ধারাবাহিক মূল্যায়নের পরিবর্তে পূর্বের পরীক্ষা পদ্ধতি বহাল রাখা, ইসলামি শিক্ষা মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য ফরয- যা কোন অবস্থাতেই গুরুত্বহীন না করে স্কুলের ইসলাম শিক্ষা বিষয়কে বোর্ড পরিক্ষায় স্থান দেয়া, মাদরাসার ইবতেদায়ী স্তরে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ সমাধান করা এবং জনবল কাঠামোতে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ দূরীকরণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী মনযোগ সহকারে তার বক্তব্য শুনেছেন, পাঠ্যপুস্তকের অসঙ্গতি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এবং সমস্যা সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেছেন। সাথে সাথে তিনি মাদরাসা শিক্ষার স্বকীয়তা রক্ষার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেছেন।
প্রতিনিধি দলে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ’র মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা একেএম মনোওর আলী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী, দারুননাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আ.খ.ম আবূ বকর সিদ্দীক, ফরিদগঞ্জ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান ও বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা নজমুল হুদা খান উপস্থিত ছিলেন।