কাগজপত্র ছাড়া দখলে রেখে বা জবরদখল করে ভূমির মালিকানা দাবির দিন শেষ হতে যাচ্ছে

কাগজপত্র ছাড়া দখলে রেখে বা জবরদখল করে ভূমির মালিকানা দাবির দিন শেষ হতে যাচ্ছে

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: সঠিক কাগজপত্র ছাড়া দখলে রেখে বা জবরদখল করে ভূমির মালিকানা দাবির দিন শেষ হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ প্রণয়ন করছে সরকার। ইতোমধ্যে খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। এ আইনের আওতায় অবৈধভাবে ভূমি দখলকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে উপযুক্ত শাস্তি ও জরিমানার ব্যবস্থা থাকবে বলেও জানিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে- আদালতে এখন যত মামলা রয়েছে তার ৭০ শতাংশ মামলাই ভূমি সংক্রান্ত- যার বেশিরভাগই ভূমির দখল বিষয়ক মামলা। আর, এসব মামলা চলতে থাকে বছরের পর বছর। নিষ্পত্তি হবার হারও উল্লেখযোগ্য নয়। নতুন আইনে ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সহজে হয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
‘দলিলাদি যার, ভূমি তার’ এ বাস্তবতা থেকেই ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের খসড়া তৈরি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে দলিলাদি বলতে যথাযথ নিবন্ধন দলিল, খতিয়ানসহ আনুষঙ্গিক নথিপত্রকে বোঝানো হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন) খলিলুর রহমান বলেন- মূলতঃ মালিকানা না থাকলে ভূমি নিজের থাকবে না। জোর করে দখল করে রাখা যাবে না- এগুলো রোধ করার জন্যই আইনটি করা হচ্ছে। তিনি জানান- যার সঠিক কাগজপত্র আছে, মালিকানার হক আছে, ভূমির মালিকানা তারই। কাগজপত্র ছাড়া জমি দখলে রাখার দিন শেষ হতে যাচ্ছে। যেক্ষেত্রে মালিকানা দাবির জন্য দুই বা তার বেশি পক্ষ হবে সেক্ষেত্রে আগে মূল মালিক কে, তা শনাক্ত করতে হবে। বিষয়টি সমাধানের জন্য আইনি ব্যবস্থা রয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে- এ আইনের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের মতামত চায় মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে এক হাজারের বেশি মতামত পাওয়া গেছে। এসব মতামত সমন্বয় করছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (আইন-১) আবুল কালাম তালুকদার বলেন- ভূমির ক্ষেত্রে যদি কোনও অপরাধ সংঘটিত হয় সেক্ষেত্রে মামলা দীর্ঘদিন পেন্ডিং থাকে। এক্ষেত্রে মানুষের পরিশ্রম এবং ব্যয় বাড়ে। সরকারি সেবার প্রতি মানুষের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তাই, মানুষকে যাতে দ্রুত সেবা দেয়া যায় সেজন্যই এ আইন। ‘আপনি একটি অভিযোগ করলেন, আমার কাগজপত্র আছে; কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখে যদি বোঝা যায় সবকিছু ঠিক আছে তাহলে সহজেই সমাধান করা যাবে। এক্ষেত্রে হয়তো আগে যেটা ১০ বছর লাগতো সেটা এখন এক বছর বা ক্ষেত্র বিশেষ ইনস্ট্যান্টলিও সমাধান হতে পারে। মোটকথা হচ্ছে, জমি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান লম্বা সময়ের পরিবর্তে কম সময়ে আনাই এ আইনের লক্ষ্য।’ তিনি বলেন- ‘আইনটির প্রাথমিক খসড়া এখন আমাদের কাছেই আছে। আমরা এটা নিয়ে আরও কাজ করছি। আমরা বিভিন্ন জনের মতামত নিয়েছি। এসব মতামত সমন্বয় করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। এরপর তারা যাচাই-বাছাই শেষে যদি অনুমোদন করে পরবর্তী ধাপে আইন মন্ত্রণালয় রয়েছে, এরপর জাতীয় সংসদে আইনটি পাস হবে। পাস হবার পর এ আইন কার্যকর হবে।’ উপসচিব বলেন, ‘মানুষ যাতে সরকারি নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে কম সময়ের মধ্যে তাদের সমস্যার সমাধান পান, সেটিই আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আইনটি পাস হলে ভূমি সংক্রান্ত অনেক সমস্যা দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি।’
এ বিষয়ে সচিবালয়ে একটি সভা শেষে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন- প্রকৃত মালিকদের স্বত্ব ও দখলভোগ নিশ্চিত করা, অবৈধভাবে ভূমির দখল রোধ এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধ প্রতিরোধ ও দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিত করা ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য। নাগরিকের কল্যাণের জন্যই আইন তৈরি করা হয়। মূল্যবান ভূ-সম্পদ রক্ষা করার প্রথম দায়িত্ব আমাদের নিজেদের। এজন্য সংশ্লিষ্ট আইন সম্পর্কেও আমাদের সবার স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত। দেশের নাগরিকরা যেন আইন-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির তথ্য সঠিকভাবে পান সেজন্যও কাজ করে যেতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *