সুরমার ঢেউ সংবাদ :: বকেয়া ২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে তিন মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবিকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। সরকার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) এ টাকা দিতে হবে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, বিটিআরসির পক্ষে ব্যারিস্টার রেজা-ই রাকিব ও মোবাইল কোম্পানির পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের কাছে ১ হাজার ৪শকোটি, রবির কাছে ৫শ কোটি ও বাংলালিংকের কাছে ৬শ ৫০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
রায়ের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের জন্য সরকার যে তরঙ্গ বরাদ্দ করে তার ওপর চার্জ করা হয়। এর সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত করা হয়। এ ভ্যাট যুক্ত করার কারণেই তারা (তিন কোম্পানি) হাইকোর্টে এসে মামলা করে। হাইকোর্ট তাদের রিট খারিজ করে দেন। এর বিরুদ্ধে তারা আপিল করলে আদালত শুনানি নিয়ে তা খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে এখন এসব প্রতিষ্ঠান থেকে এনবিআর ও বিটিআরসি টাকা আদায় করতে পারবে। অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেন, ‘আমরা শুনানিতে বলেছি, ভ্যাটের ক্ষেত্রে ২০১১ সালের আইনটা সংশোধন করা হয়েছে। এ সংশোধনের ফলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা এ ভ্যাট দাবি করতে পারি।’ বিটিআরসি পক্ষের আইনজীবী খোন্দকার রেজা-ই রাকিব বলেন, ‘তিনটি অপারেটরের কাছে লাইসেন্স নবায়ন ফি, রেভিনিউ শেয়ারিং ফিসহ বিভিন্ন ফি বাবাদ ২ হাজার ২শ কোটি টাকার মতো পাব। এর সঙ্গে আরো ৩শ কোটি টাকার মতো পাওয়া যাবে। রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার পর থেকে আমরা টাকা দাবি করব।’ তবে সরকারের পাওনা কোটি টাকা কতদিনের মধ্যে দিতে হবে, সেটি নিশ্চিত করেননি আইনজীবীরা।
বিটিআরসি টুজি ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দের বিপরীতে ২০১২ সালে গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের কাছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট চায়। কিন্তু অপারেটরগুলো ভ্যাট অব্যাহতি চেয়ে আদালতে আসে। এর পর থেকেই টেলিকম অপারেটর এবং বিটিআরসির মধ্যে আইনি লড়াই চলে আসছে। এর আগে ২০০৮ সালে কেনা তরঙ্গের বিপরীতে গ্রামীণফোনের তরঙ্গ বরাদ্দের জন্য দাবি করা অতিরিক্ত অর্থ (২৩৬ কোটি ৮০ লাখ) পরিশোধের জন্য চিঠি দেয় বিটিআরসি। পরে হাইকোর্ট ওই চিঠি অবৈধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে লাইসেন্স ও স্পেকট্রাম ফির জন্য প্রদেয় টাকা থেকে কোনো ভ্যাট ও ট্যাক্স কর্তন করা যাবে না বলে উল্লেখ করা চিঠির অন্য অংশ বৈধ বলে ঘোষণা করেন আদালত। তবে বিটিআরসির পক্ষ থেকে পরে রিট করলে হেরে যায় তিন সেলফোন কোম্পানি।
এদিকে সিম পরিবর্তনের নামে রবি, এয়ারটেল, বাংলালিংক ও গ্রামীণফোন ২ হাজার ৪৮ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে বলে ২০১৫ সালে মামলা করে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)। ২০০৭-১১ সাল পর্যন্ত চারটি মোবাইল কোম্পানি এ ভ্যাট ফাঁকি দেয়। এয়ারটেল অবশ্য পরে রবির সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। ফলে এয়ারটেলের দায় রবি আজিয়াটা লিমিটেডের কাঁধে বর্তায়। সুদসহ চার কোম্পানির সেই অর্থ গিয়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে। কেননা বকেয়া অর্থের ওপর প্রতি মাসে ২ শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য। কিন্তু কোম্পানিগুলো কোনো ভ্যাট ফাঁকি দেয়নি বলে ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে আপিল করে। দীর্ঘ দুই বছর পর ২০১৭ সালে এনবিআরের পক্ষে রায় দেন আদালত। অর্থাৎ ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের পরিমাণ সুদসহ পরিশোধ করতে কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেন আদালত। সেলফোন কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ফোন কোম্পানিগুলো গ্রাহকের সেবা দেয়ার মাধ্যমেই মোটা অংকের ব্যবসা করছে। কিন্তু সরকারের প্রযোজ্য রাজস্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই অনিয়ম করছে তারা। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও জনবলের অভাবে সব অনিয়ম ধরতে পারছে না এনবিআর। ফলে, ফোন কোম্পানিগুলো কৌশলে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।