সুরমার ঢেউ সংবাদ :: যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ফাইট ফর রাইটস ইন্টারন্যাশনাল (এফআরআই) এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন’ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, ডিসেম্বর হচ্ছে বিজয়ের মাস। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের ঘোষণাপত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল রাষ্ট্রের চরিত্র হবে গণতান্ত্রিক এবং স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্য, মানবিক মর্যাদা বা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক ন্যায় বিচার বা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করাই মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্যই মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রের প্রতিশ্রুতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন কেড়ে নিয়েছিল। প্রতিষ্ঠা করেছিল এক দলীয় বাকশাল। বক্তারা বলেন, বর্তমানে শেখ মুজিব কন্যা শেখ হাসিনাও দেশের মানুষের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানবাধিকারকে পদদলিত করে আইনের শাসনের বদলে এক পরিবারের শাসন কায়েম করেছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য লড়াই করছে দেশে মানুষ।
গত ৫ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যার পর পূর্ব লন্ডনের একটি রেস্টুরেন্টে ফাইট ফর রাইটস ইন্টারন্যাশনালের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা একথা বলেন। সংগঠনটির সভাপতি মো : রায়হান উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক বুরহান উদ্দিন চৌধুরী ও সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমিনুল ইসলাম সফর এর যৌথ পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমার দেশ ইউকে’র নির্বাহী সম্পাদক অলিউল্লাহ নোমান। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা ও সাপ্তাহিক জয়যাত্রার নির্বাহী সম্পাদক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, বিশেষ অতিথি ছিলেন এফআরআই এর সহ-সভাপতি মোঃ তরিকুল ইসলাম, ইআরআই’র চেয়ারম্যান মাহবুব আলী খানসূর ও সাবেক ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান সাফি এফআরআই’র সহ সভাপতি আমিনুল ইসলাম মুকুল, আহমদ আলী, কে আকরাম, মির্জা আবুল হোসেন, এডভোকেট রোকসানা আক্তার, লন্ডন মহানগর যুবদলের সহ সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এবাদুর রহমান রাজন, এফআরআই’র সহ সম্পাদক মো: কামরুল হাসান রাকিব, মোঃ ইকবাল হুসেন, মোহাম্মদ আলী, প্রচার সম্পাদক মোঃ ফান্টু, সহ প্রচার সম্পাদক মোঃ সেলিম রেজা, লন্ডন সিটি যুবদলের সহসভাপতি মোঃ আব্দুল গাফফার শাহীন, মানবাধিকার কর্মী রায়হান, মোঃ তারেকুল ইসলাম ও মোঃ ফজল আহমদ। ফখরুল ইসলাম এর কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে সংগীত পরিবেশন করেন সংগঠনটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক রায়হান চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অলিউল্লাহ নোমান বলেন, গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু ৫২ বছর পরও সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। দেশের মানুষ এখনো গণতন্ত্র এবং মানুষের অধিকার ও ন্যায় বিচারের জন্য রাজপথে লড়াই করতে হচ্ছে। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার মানুষ ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। গুম, খুন, দুর্নীতি ও দু:শাসনের ফলে মানুষ নিপীড়িত হচ্ছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কথা বলার স্বাধীনতা নেই, বিদেশ থেকে আমরা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কথা বলে যাচ্ছি। তথ্য প্রযুক্তি আইনের নামে কালো আইন তৈরি করে মানুষের মত প্রকাশের সকল অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে সরকার। মানুষ নিজের অভিমত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যক্ত করতে পারছে না।
প্রধান বক্তা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু বলেন, আওয়ামীলীগ মানে দুঃশাসন। গণতন্ত্রহীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। আওয়ামীলীগ মানে বাকশাল, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, মিডিয়ার ওপর আঘাত। এখন সময় এসেছে ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মত, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মত ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখা।
সভাপতির বক্তব্যে রায়হান উদ্দিন বলেন, আমাদের দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। বিচার বহির্ভূতভাবে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। মানুষের ভোটাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত গুম, খুন, হত্যা ও ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটছে। আমরা বিদেশ থেকে কথা বললেও বাংলাদেশে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, বিদেশে সরকার বিরোধীদের বিচার করা হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন মো : মিফতা উদ্দীন, মো : ফখরুল মিয়া, আসাদুজ্জামান শফি, জুবায়ের আহমদ, মো : আব্দুল মুহিত, রুবেল আহমদ, লায়েক আহমেদ, মোহাম্মদ এবাদুর রহমান রাজন, মিজানুর রহমান, মো শাহজান ইউসুফ, মো আলী শ্যামল, মো নুরুল আমিন, মো মুক্তাদির আহমদ, নাজমুল ইসলাম, হুমায়ুন আহমদ প্রমুখ।