হাকালুকি হাওড়ের কালাপানি বিলের ‘খাস কালেকশন’ এর নামে হরিলুট

হাকালুকি হাওড়ের কালাপানি বিলের ‘খাস কালেকশন’ এর নামে হরিলুট

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: হাকালুকি হাওরের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলাধীন এলাকার প্রায় ২৮৬ একর বিস্তৃত কালাপানি জলমহালের খাস কালেকশনের নামে চলছে হরিলুট। হাকালুকি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে হাজার হাজার টাকার মাছ লুটের অভিযোগ ওঠেছে স্থানীয়ভাবে। ফলে, প্রতারিত ও বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত মৎস্যজীবীরা।
অন্যদিকে প্রভাবশালী মহল ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কিছু আসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। উপজেলা ভূমি অফিস ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- কালাপানি জলমহালটি এবার কাঙ্খিত মূল্য না পাওয়ায় ইজারা দেয়া হয়নি। এরপর জেলা প্রশাসকের সংশ্লিষ্ট কার্যালয় থেকে বড়লেখা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর মাধ্যমে স্থানীয় তহশিলদারকে মাছ আহরণ করে বিক্রির পর প্রাপ্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়।
নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে মৌখিকভাবে এ নির্দেশনা পান হাকালুকি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান। এরপর তিনি এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জলমহালে মাছ আহরণে নিজের পছন্দের কুলাউড়া উপজেলার বাসিন্দা ইলিয়াছ আলীকে নিয়োজিত করেন। এরপর গত ১২ দিন ধরে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে জলমহাল থেকে মাছ শিকার করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান- তহশিলদার সিন্ডিকেট প্রায় ১২ দিন ধরে জলমহাল থেকে হাজার হাজার টাকার মাছ ধরে ব্যবসায়িদের নিকট বিক্রি করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- খাস কালেকশনের নামে সিন্ডিকেট সদস্যদের দ্বারা মাছ আহরণ করে বিক্রি করলেও তহশিলদার মাছ বিক্রির অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেননি। এমনকি তিনি মাছ আহরণ করছেন বলেও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেননি। সূত্র জানায়- মোটা অংকের অর্থ পকেটস্থ করে তিনি জলমহালটি সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিয়েছেন। উপরমহল অবহিত হলে যৎসাম্যান্য অর্থ কোষাগারে জমা দিয়ে দায় সারবেন।
এ ব্যাপারে হাকালুকি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আব্দুল হান্নান জানান- এখনও খাস কালেকশন শুরু করেননি। এখনও মাছ ধরা শুরু হয়নি। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে মাছ ধরে বিক্রি করছেন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এমন তথ্য আছে বলার একপর্যায়ে তিনি মাছ অহরণের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘খাস কালেকশনের জন্য দুই সপ্তাহ আগে এসিল্যান্ডের মৌখিক নির্দেশনা পেয়ে মাছ ধরাচ্ছেন। ইলিয়াছ আলী নামে এক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এ পর্যন্ত খরচ বাদে ১২ হাজার টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে। এগুলো জমা দেননি। পরে দেবেন।’
তবে তহশিলদার ও ইলিয়াছ আলীর কথায় মিলেছে বিস্তর ফারাক। ইলিয়াছ আলী বলেন- ‘আমরা হাকালুকি তহশিলে যাই। তহশিলদারকে জলমহাল থেকে মাছ ধরতে সব টাকা পরিশোধ করেছি। তহশিলদার বলেছেন মাছ ধরেন কোন বাধা নেই। সরকারের পক্ষে খাস কালেকশনের জন্য আজকে আমাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। আর কিছু বলতে পারব না। যা জানার তহশিলদার ও ডিসির কাছ থেকে জানুন।’
বড়লেখা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন- ‘জেলা পর্যায় থেকে খাস কালেকশনের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় বিধি মোতাবেক তহশিলদারকে মৎস্য আহরণ করে বিক্রিত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে। তহশিলদার এখনও আমাকে কিছু জানাননি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *