সুরমার ঢেউ সংবাদ :: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সময়ের সাথে সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। লবণাক্ততা ছাড়াও বন্যাকবলিত নিম্নাঞ্চল ও খরাপ্রবণ উত্তরাঞ্চলে ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। এতে শঙ্কা দেখা দিয়েছে এসব এলাকার ধান উৎপাদন নিয়ে। এ সমস্যা মোকাবিলায় জীবপ্রযুক্তিতে ধান গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) গবেষকরা। সম্প্রতি গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চলে আবাদযোগ্য লবণসহিষ্ণু ট্রান্সজেনিক ধান উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে।
শাবিপ্রবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের গবেষকদের সর্বত্র অংশগ্রহণে ধানের এ নতুন জাত উদ্ভাবনের গবেষণা পরিচালনা হচ্ছে। এ ছাড়াও বন্য ধান থেকে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশসহিষ্ণু (স্ট্রেস টলারেন্ট) সম্ভাব্য কার্যকর জিন নির্ণয় করা হয়েছে। এদের মধ্যে লবণাক্ততাসহিষ্ণু এসটিএল-১, জলাবদ্ধতাসহিষ্ণু এসইউবি-১ এ ১ ও এসকে-১ এবং খরাসহিষ্ণু ডব্লিওআরকেওয়াই-২ উদ্ভাবন করা হয়েছ, যা থেকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে শাবিপ্রবিতে প্রথমবারের মতো কন্সট্রাক্ট তৈরি করা হয়েছে।
জানা যায়, ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)-এর অর্থায়নে পরিচালিত জীবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এই লবণসহিষ্ণু ধান উদ্ভাবনে গবেষণা করা হয়। এ সম্পর্কিত গবেষণাপত্র এলসিভিয়ারের বায়োটেকনোলজি রিপোর্টার্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের নিজস্ব ট্রান্সজেনিক গ্রিনহাউস ল্যাবে এ গবেষণা কার্যক্রম চলে। উদ্ভাবিত ধানের জাতটি বর্তমানে মাঠপর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও শাবিপ্রবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের যৌথ গবেষণায় লবণসহিষ্ণু ধান উৎপাদনের গবেষণার নতুন নতুন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে বন্য ধান থেকে লবণসহিষ্ণু তিনটি জিন নির্ণয় করা হয়েছে, যা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ধানের উন্নত জাতের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে লবণসহিষ্ণু ট্রান্সজেনিক ধান উৎপাদন করা হয়। কেবল ধান নয়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রেও লবণসহিষ্ণুতার বিষয়টি নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মাস্টার্স থিসিসে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী জেবা ফাইজাহ্ রহমান প্ল্যান্ট জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাবে তার গবেষণা কাজ করছেন। তিনি জানান, ল্যাবে বিভিন্ন জিন কন্সট্রাক্ট তৈরি করা আছে। এ জিনগুলো লবণাক্ততা, খরা এবং জলাবদ্ধতাসহ প্রতিকূল পরিবেশে উদ্ভিদকে বাঁচিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখে।
এ জিন কন্সট্রাক্ট বিভিন্ন জীবপ্রযুক্তি পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল ধানের জাতে ট্রান্সফার করা হবে। জিন ট্রান্সফারের ফলে এই ধানের জাতগুলো লবণাক্ততা, খরা এবং জলাবদ্ধতা সহনশীল জাতে উন্নীত করা যাবে। এতে দেশের প্রতিকূল পরিবেশের অঞ্চলগুলোতেও উচ্চফলনশীল ধানের জাত চাষ করা যাবে এবং এর ফলে অধিক ধান উৎপাদন সম্ভব হবে।
শাবিপ্রবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক প্রধান বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছরই বিভিন্ন কারণে চাষাবাদযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে এই বর্ধিত জনসংখ্যাকে আমাদের খাওয়াতে হবে। আমাদের যেসব জমিগুলোতে চাষাবাদ করা যায় না, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমিগুলো, সুনামগঞ্জের জলাবদ্ধ জমিগুলো ও উত্তরের খরাপ্রবণ জমিগুলোতে কীভাবে ধান উৎপাদন করা যায় তা নিয়েই আমাদের গবেষণার মুখ্য উদ্দেশ্য। ইতোমধ্যে সমুদ্রের লবণাক্ত পানিসহিষ্ণু ট্রান্সজেনিক ধানের চারা উদ্ভাবন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কীভাবে এর পরিসর বাড়ানো যায় বিশেষ করে জলাবদ্ধতা সহনশীল ও খরা সহনশীল ধান উৎপাদনের জন্য কাজ চলছে বলে জানান তিনি।