সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ২৫০ কোটি টাকার ভূমি বেদখলে রয়েছে যুগ যুগ যাবৎ। জেলা জুড়ে সওজ’র ৩৮১ কিলোমিটার সড়কের ১ হাজার ৫শ ৩৫ একর ভূমির মধ্যে প্রধান প্রধান সড়ক সংলগ্ন বেশিরভাগ ভূমি বেদখলে রয়েছে। জেলা শহরের বেরীরপাড়, শাহমোস্তফা সড়ক ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার শ্রীমঙ্গল পৌরশহর, কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ বাজার, শমসেরনগরবাজার, কুলাউড়া উপজেলার কুলাউড়া পৌরশহর, বড়লেখা উপজেলা সদর, জুড়ী উপজেলা সদরসহ বেশ ক’টি বাজারে সড়ক বিভাগের কমপক্ষে আরো অন্ততঃ ৫০ একর ভূমি বেদখলে রয়েছে। বেদখল হওয়া এসব ভূমির মূল্য আনুমানিক প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।
জেলা জুড়ে সড়ক বিভাগের এসব বেদখল ভূমিতে তৈরি করা হয়েছে আধাপাকা ও পাকা স্থাপনা। ইতিমধ্যে ৩টি বাজারে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে আনুমানিক প্রায় ২৮ কোটি টাকার ভূমি উদ্ধার করা হলেও, অবশিষ্ট সকল ভূমি বেদখলেই রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- এসব ভূমি দখলদাররা প্রায় সবাই স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের লোক।
মৌলভীবাজার সওজ জানায়- জেলা জুড়ে তাদের ৩৮১ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এসব সড়কের কাছে থাকা এসব ভূমি উদ্ধার পরিকল্পনা থাকলেও, লোকবলের অভাবে তা বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। কিছু ভূমি উদ্ধার করা হলেও লোকবল না থাকার কারণে তা ধীরে ধীরে আবার জবরদখল হয়ে যায়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সম্প্রতি উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সদর উপজেলার সরকারবাজার, শেরপুর ও রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজারে ৫ একর ৬৫ শতক ভূমি উদ্ধার করে। স্থানীয়দের মতে- উদ্ধারকৃত ভূমির মূল্য প্রতি শতক ৫ লাখ টাকা হিসাবে ২৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সংশ্লিষ্ট এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান- এসকল বাজারে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ভূমি উদ্ধার করা হলেও, কিছুদিনের মধ্য্যেই তা জবরদখল করে নেয় স্থানীয় ভূমিখেকোরা।
জেলা শহরের বেরীরপাড়, শাহমোস্তফা সড়ক ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার শ্রীমঙ্গল পৌর শহর, কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ বাজার, শমসেরনগর বাজার, কুলাউড়া উপজেলার কুলাউড়া পৌরশহর, বড়লেখা উপজেলা সদর, জুড়ী উপজেলা সদরসহ আরো বেশ ক’টি বাজারে সড়ক বিভাগের কমপক্ষে আরো প্রায় ৫০ একর জমি জবরদখলে রয়েছে- যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। সড়ক বিভাগ পুরো জবরদখলের পরিসংখ্যান না দিলেও এতো টাকার জমি বেদখলে রয়েছে এমনটা স্বীকার করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্র আরো জানায়- জেলা শহরের বেড়িরপাড় ও জুড়ি উপজেলায় মামলা চলমান থাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছেনা। তবে, জুড়ী উপজেলায় শুরু হওয়া জবরদখল উচ্ছেদ করে স্থাপনা তৈরির কাজ বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সওজ।
মৌলভীবাজার সড়ক বিভাগ জানায়- তাদের অধীনে সদর সড়ক উপ-বিভাগ, কুলাউড়া উপ-বিভাগ, শ্রীমঙ্গল উপ-বিভাগ ও মেকানিক বিভাগসহ মোট ৪টি বিভাগ রয়েছে। জেলা ও উপ-বিভাগ মিলিয়ে এ দফতরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর ৪টি পদই শুন্য। উপ-সহকারি প্রকৌশলীর ১৩টি পদের মধ্যে ৯টি পদই শুন্য। এছাড়াও সহকারি প্রকৌশলী, প্রাক্কলনকারী, ওয়ার্ক সুপারভাইজার, প্রধান করণিক ও সিনিয়র একাউন্টস্সহ ২৭টি পদে ১২২ জনের মধ্যে কর্মরত আছেন ৩৩ জন, বাকী ৮৯ জনই নেই।
জেলা সড়ক বিভাগের কার্যসহকারি মোঃ আমানত খান চৌধুরী বলেন- জনশক্তি ঘাটতি পুরণে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগে একাধিবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু, কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছেনা।
জেলা সড়ক বিভাগের সার্ভেয়ার হিটলার চাকমা জানান- জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বেদখলে থাকা জমি পর্যায়ক্রমে আমরা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে কিছুটা উদ্ধার করছি। তিনি বলেন- জমি উদ্ধার করা হলেও লোকবল সংকটের কারণে আবার বেদখল হয়ে যায়।
মৌলভীবাজার সওজ’র নির্বাহি প্রকৌশলী মোঃ জিয়া উদ্দিন জানান- শহরের বেরীরপাড়সহ জেলাজুড়ে তাদের ৩৮১ কিলোমিটার সড়ক মিলিয়ে তাদের ১ হাজার ৫শ ৩৫ একর জমি রয়েছে। ইতিমধ্যে তারা সদর উপজেলার মৌলভীবাজার-শেরপুর সড়কের সরকারবাজার, শেরপুরবাজার ও রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজারে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ৫ একর ৬৫ শতক ভূমি উদ্বার করেছেন। সড়ক বিভাগের জবরদখলে থাকা সিংহভাগ জমি কেন উদ্ধার করা হচ্ছেনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নির্বাহি প্রকৌশলী বলেন- তাদের দফতরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, উপ-সহকারি প্রকৌশলী ও সহকারি প্রকৌশলীসহ ৫ দফতরে ৮৯ জনই কর্মরত নেই। ফলে, দাপ্তরিক কার্যক্রম শতভাগ চালানো সম্ভব হচ্ছেনা।