উৎপাদন অব্যাহত রাখার স্বার্থে চা শিল্পে উপকর বিলুপ্তির দাবি

উৎপাদন অব্যাহত রাখার স্বার্থে চা শিল্পে উপকর বিলুপ্তির দাবি

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: উৎপাদন অব্যাহত রাখার স্বার্থে চা শিল্পে উপকর বিলুপ্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশি চা বাগান মালিকদের সংগঠন চা সংসদ। চায়ের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তার ওপর এ শিল্প খাতে দিতে হয় উপকর। সম্প্রতি বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি। চা সংসদ বলছে, গত ১০ বছরে চায়ের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৪৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এর বিপরীতে নিলামে কেজি প্রতি চায়ের গড় মূল্য বেড়েছে মাত্র দশমিক ১৬ শতাংশ। অন্যদিকে, শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে ১৪৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে ১১২ দশমিক ৬ শতাংশ। তার ওপর এই উপকর অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, উপকর অবিলম্বে বাতিল করা উচিত।
১৯৭৭ সালের চা অধ্যাদেশ এবং ২০১৬ সালের চা আইনের আওতায় দেশে উৎপাদিত সব চায়ের বিক্রি মূল্যের ওপর ১ শতাংশ হারে চা উপকর আদায় করা হয়ে থাকে। এই উপকর আদায় থেকে বাংলাদেশ চা বোর্ডের ব্যয় নির্বাহ করে থাকে সরকার। কিন্তু, কয়েক বছর ধরে উপকরের হার ১০০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য চা বোর্ড জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে চা সংসদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেওয়া চিঠিতে সরকারি বাজেট বা অনুদান থেকে বাংলাদেশ চা বোর্ডের ব্যয় নির্বাহ করার অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, চায়ের ওপর উপকর আদায় উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। ২০১৭ সালের ১ জুলাই ভারতে উপকর বিলুপ্ত করা হয়েছে। অথচ, বাংলাদেশে চা উৎপাদনকারীরা উপকর দিতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশ চা বোর্ড হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা, যা চা শিল্প নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ভারতে চা উপকর বিলুপ্ত করার পর ইন্ডিয়ান টি বোর্ডের প্রয়োজনীয় সব উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট থেকে ছাড় করা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে টিকে থাকার সক্ষমতা ও টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং চা চাষকে লাভজনক করার লক্ষ্যে উপকর বিলুপ্ত করা জরুরি বলে মনে করে চা সংসদ। চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশে উৎপাদিত চা প্রধানত পাবলিক নিলামে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এ কারণে চায়ের বিক্রি মূল্যের ওপর উৎপাদনকারীদের কোনো হাত নেই। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে নিম্নমানের চা দেশের বাজারে প্রবেশের কারণে নিলামে চায়ের দরপতন হচ্ছে। এতে অনেক চা বাগান উৎপাদন খরচের নিচে চা বিক্রি করছে। অনেক চা অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে, যা পরবর্তীতে অনেক কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে, উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। উপকর দেওয়ার বিধান চালু থাকলে চা উৎপাদনকারীদের লোকসান আরও বাড়বে, যা এ শিল্পের টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত করবে। চা সংসদের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ১৬৮ বছরের পুরনো বাংলাদেশ চা শিল্প বর্তমানে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। চা শিল্পে বর্তমানে বহু চ্যালেঞ্জ আছে। এর মধ্যে আছে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে চা উৎপাদন ব্যাহত হওয়া। গ্যাস, বিদ্যুৎ, কীটনাশক, কৃষি উপকরণ, পরিবহন, চা কারখানার যন্ত্রপাতি ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, বাগান সম্প্রসারণ, ভূমি উন্নয়ন কর ইত্যাদি খাতে ব্যয় বেড়েছে। চা কৃষিভিত্তিক শিল্প হলেও চা চাষকে কৃষি খাত বিবেচনায় ডাল, তৈলবীজ, মসলা জাতীয় ফসল ও ভুট্ট চাষের মতো ৪ শতাংশ সরল সুদে ঋণ দেওয়া হয় না। চা শিল্পকে ৯ শতাংশ সুদেই ঋণ নিতে হচ্ছে।
দেশীয় চা শিল্পকে পার্শ্ববর্তী দেশ এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাই, চা সংসদ চা শিল্পে বিদ্যমান উপকর প্রত্যাহার করার দাবি পূরণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *