অভাবের তাড়নায় ফেসবুকে চাকরি খুঁজছেন সুনামগঞ্জ জেলে থাকা ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি

অভাবের তাড়নায় ফেসবুকে চাকরি খুঁজছেন সুনামগঞ্জ জেলে থাকা ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: অভাবের তাড়নায় ফেসবুকে চাকরি খুঁজছেন জেলে থাকা ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার আলোচিত ঝুমন দাস দ্বিতীয়বারের মতো জেলে হাজতে আছেন। সর্বশেষ আটকের পর দুই মাস কেটে গেছে। জামিনের জন্য আবেদন করলেও তা খারিজ করে দেয় আদালত। এ অবস্থায় সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া ঝুমন দাসের স্ত্রী এবার চাকরি খুঁজছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে।
ঝুমন দাস তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী থাকায় তার অনুপস্থিতিতে সাংসারিক অভাবে পড়েছেন তার স্ত্রী সুইটি রানী দাস। ২৯ অক্টোবর শনিবার চাকরি খুঁজে সুইটি ফেসবুকে যে পোস্ট দেন সেখানে লেখেন (বাক্য ও বানান অপরিবর্তিত) ‘কারো জানা থাকলে আমার একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়া যাবে কি ? ফ্যাক্ট, আমার স্বামীর মামলা ও সংসার চালানো খুব খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।’ সুইটি রানী দাস সংবাদমাধ্যমকে বলেন- পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী যদি জেলে চলে যায় তাহলে সংসার চলবে কী করে ? আর আমার স্বামী জেল থেকে মুক্তি পেলেও তাকে কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়না। তাকে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে হলেও পুলিশের অনুমতি নিতে হয়। এ কারণে সবাই মিলে বাড়িতেই একটা দোকান দিয়েছিলাম। কোনো মতে চলে যাচ্ছিল। তবে উনি (ঝুমন) আবার আটক হয়ে জেলে যাওয়ায় পরিবারে টাকার টান পড়েছে।
সুইটি বলেন, ‘দোকানে মালামাল নেই, কারাগারে যাওয়া-আসা, মামলার খরচ চালানো আমার জন্য কষ্টকর হয়ে গেছে। গ্রাম থেকে সুদে ৭০ হাজার টাকার মতো ধারদেনা করেছি, সেগুলোই বা দেব কীভাবে ?’ তিনি বলেন- ‘আমি অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী, তিনি (ঝুমন) চাইতেন আমি পড়াশুনা করি। কিন্তু এখন স্বামীকে জেল থেকে মুক্ত করা ও পরিবারের খরচ চালাতে আমার একটা কাজ পাওয়া বেশি প্রয়োজন।’ ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে ঝুমন দাসের মা নীভা রানী দাস বলেন, ‘এর আগে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলার ঘটনার কারণে আমার ছেলেকে দোষ দিলেও এবারের ঘটনায় আমার ছেলে নির্দোষ। সে নিজে (ফেসবুকে) কিছু লেখেনি, অন্যের লেখা ছেড়ে দেয়ার (শেয়ার) কারণে সে জেলে গেছে। আমার ছেলে নির্দোষ, আমি আমার ছেলের মুক্তি চাই।’
ফেসবুকে ‘উসকানিমূলক’ পোস্ট শেয়ার দেয়ার অভিযোগে ৩০ আগস্ট সকালে ঝুমন দাসকে হেফাজতে নেয় শাল্লা থানা পুলিশ। প্রায় ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের নবরত্ন মন্দিরের গেটে ঝোলানো মসজিদের দানবাক্সের একটি ছবি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। হেঁটে দেশ পরিভ্রমণে নামা এক ব্যক্তি ছবিটি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেই ছবিটি শেয়ারের কারণে এবার গ্রেপ্তার হন ঝুমন দাস। এর আগে গত বছরের ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ‘শানে রিসালাত সম্মেলন’ নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক এতে বক্তব্য দেন। এই সমাবেশের পরদিন ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ঝুমন দাস। স্ট্যাটাসে তিনি মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন। পরদিন কয়েক হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে হামলা চালায় নোয়াগাঁও গ্রামে। তারা ঝুমন দাসের বাড়িসহ হাওরপারের হিন্দু গ্রামটির প্রায় ৯০টি বাড়ি, মন্দির ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
এরপর ২২ মার্চ ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম। ঝুমন গ্রেপ্তার হওয়ার ছয় মাস পর গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর শর্তসাপেক্ষে হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান। ঝুমনের বিরুদ্ধে বর্তমান মামলার অবস্থা জানতে চাইলে তার আইনজীবী পংকজ কুমার নাথ রোববার বলেন, ‘ঝুমনের জামিনের আবেদনটি সুনামগঞ্জের আদালত খারিজ করে দিয়েছে। বর্তমানে জামিনের আবেদনটি হাইকোর্টে রয়েছে, এখন বাকিটা মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের ওপর নির্ভর করছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *