সুরমার ঢেউ সংবাদ :: কোনো সাংবাদিক তার প্রতিবেদনের সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। সাংবাদিককে তার সংবাদের উৎস (সোর্স) প্রকাশ না করার ক্ষেত্রে আইন সুরক্ষা দিয়েছে। ২৩ অক্টোবর রবিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ ৫১ পাতার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দেন। হাইকোর্ট বলেন- গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এটা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রক্ষায় সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, আইন সাংবাদিকদের সংবাদের উৎস (সোর্স) প্রকাশ না করার ক্ষেত্রে সুরক্ষা দিয়েছে। রায়ে আদালত বলেন, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে দেয়া আছে। আধুনিক বিশ্বে জানার অধিকার সবারই আছে। রায়ে আদালত আরও বলেন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রক্ষায় সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
গণমাধ্যমের কাজ হলো জনগণকে সজাগ করা। বর্তমান সময়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ছে। আর এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, হলুদ সাংবাদিকতা গ্রহণযোগ্য ও সমর্থনযোগ্য নয় বলেও উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেন, সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে গণমাধ্যমের মনোযোগী হওয়া উচিত।
রায়ে বলা হয়, সাংবাদিকের সংবাদ লেখার তথ্যের উৎস কী, সেটি জানতে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। সাংবাদিকের কোনো সংবাদের বিষয়ে অভিযোগ থাকলে তা নিয়ে আদালতের আগে প্রেস কাউন্সিলের শরণাপন্ন হবার কথা বলেন আদালত। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, সাংবাদিকদের বিষয়ে রায়ে আদালত বলছেন, সাংবাদিকরা সব স্থানে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। সরকারি, আধা সরকারি অফিসে যেতে পারবেন। আর, তথ্যের উৎস জানার বিষয়ে সাংবাদিকদের চাপ প্রয়োগ করা যাবে না।
গত বছরের ২ মার্চ ‘২০ কোটিতে প্রকৌশলী আশরাফুলের দায়মুক্তি! দুর্নীতি দমনে দুদক স্টাইল’ শিরোনামে দৈনিক ইনকিলাবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সে প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনা হলে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নথিপত্র তলব করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি প্রতিবেদককে তার তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেন। এ রুলের শুনানিতে চলতি বছরের ২১ জুন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ইনকিলাবের প্রতিবেদনকে ‘মাফিয়া জার্নালিজম’ বলে প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চান। আর, ইনকিলাবের প্রতিবেদকের পক্ষের আইনজীবী শিশির মনির সংবিধানে থাকা সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতার বিষয় এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় সোর্স প্রকাশ না করার নীতির কথা তুলে ধরেন। শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, এটি আদালত অবমাননার মামলা নয়। আর, সাংবাদিকের কোনো সংবাদের বিষয়ে অভিযোগ থাকলে আগে প্রেস কাউন্সিলের শরণাপন্ন হতে পারেন। সাংবাদিকের সংবাদের সোর্স আমরা জানতে চাইনি। শুনানি শেষে উচ্চ আদালত রুল নিষ্পত্তি করে দেন। একইসঙ্গে গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম ও তার স্ত্রীর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন বিষয় অনুসন্ধানে আগের কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে নতুন কর্মকর্তার মাধ্যমে পুনরায় অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। ২৩ অক্টোবর এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।