সুরমার ঢেউ সংবাদ :: জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের নেপথ্য কারণ হিসেবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবির) দুই কর্মকর্তার গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি। দুই কর্মকর্তা হলেন- পিজিসিবির উপসহকারী প্রকৌশলী আল্লামা হাসান বখতিয়ার ও সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান। তদন্তসংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন প্রকাশ করে পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক মো. ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরীকে প্রধান করে তৈরি করা ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ জানতে তিনটি কমিটি করা হয়েছিল। এরমধ্যে পিজিসিবির (পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ) গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমরা হাতে পেয়েছি। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, পিজিসিবি-তে দায়িত্ব পালনে গাফিলতি হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই কর্মকর্তাকে আমরা চিহ্নিত করেছি। এদের মধ্যে একজন সহকারী প্রকৌশলী এবং অপরজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া এ ঘটনায় বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা থাকতে পারে উল্লেখ করে নসরুল হামিদ বলেন- বাকি দুই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যদি অন্যান্য কারোর গাফিলতি প্রমানিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব এলাহী চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবীবুর রহমান বলেন- প্রকৌশলী দু’জন পিজিসিবির সেন্ট্রাল অপারেশন টিমে কাজ করে থাকে। এখন কারিগরিসহ বিভিন্ন কারনে প্রকৌশলীদের সাবস্টেশন গুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিন (৪ অক্টোবর) তাদের দু’জনকে ঘোড়াশাল সাবস্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। সম্ভবত সাবস্টেশনের কর্মকর্তারা আগে থেকেই কোনো একটা সমস্যা আঁচ করেছিলেন। তাই তাদের ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে কর্মকর্তারা সঠিকভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। তাই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিলো। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে ৪ অক্টোবর ঢাকাসহ দেশের প্রায় অর্ধেক অংশ দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। সেদিন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড ফেল করার পর প্রায় আট ঘণ্টা অন্ধকারে ছিলো দেশের একাংশ। এর আগে কয়েকবার ছোট পরিসরে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ঘটে ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর। সেবার সারা দেশ ১৭ ঘণ্টা ব্ল্যাকআউট ছিল। বিদ্যুৎপ্রবাহ লাইনে চলমান ফ্রিকোয়েন্সিতে তারতম্য ঘটলেই ব্ল্যাকআউটের ঘটনা ঘটতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বড় কোনো বিপর্যয় এড়াতে নিজ থেকেই ‘গ্রিড ট্রিপ’ ঘটে বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে- বাংলাদেশে ৫০ মেগাহার্টজ তরঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। কোনো কারণে এটি বেড়ে কিংবা কমে গেলে গ্রিড ট্রিপের ঘটনা ঘটে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ৪ অক্টোবরের ব্ল্যাকআউটের জন্য গ্রিড ট্রিপকেই দায়ী করেছিল এ ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি। এর আগে ২০১৪ সালের নভেম্বরে ব্ল্যাকআউটের পর ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। ওই কমিটির প্রতিবেদনে কারিগরি ত্রুটি, দায়িত্ব পালনে সীমাবদ্ধতা এবং নির্দেশ পালনে অবহেলাকে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল করা, কারিগরি ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ২০ দফা সুপারিশ করা হয়, তবে ৮ বছরেও বেশির ভাগ সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। ২০১৭ সালে গ্রিড বিপর্যয়ে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল দেশের উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৩২ জেলা। গত মাসে গ্রিড বিপর্যয়ে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল অঞ্চল ৪০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল।