সুরমার ঢেউ সংবাদ :: ভোলা জেলায় ভাড়ায় নিয়ে চাঁদপুর জেলার ‘এমভি জমাদার পরিবহণ’ নামীয় বাল্কহেড জাহাজ গায়েবের অভিযোগে ভোলা সদরের ৪ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন জাহাজটির মালিকপক্ষ। এর আগে মালিকপক্ষ গত ৩০ আগষ্ট ভোলার পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দায়ের করলে, পুলিশ সুপার ওইদিনই ভোলা সদর থানার ওসিকে ‘পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে গৃহিত ব্যবস্থাদি উল্লেখপূর্বক বিস্তারিত প্রতিবেদন’ দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু, ওসি মালিকপক্ষকে আদালতে মামলা করতে বললে, মালিকপক্ষ গত ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করেন।
এমভি জমাদার পরিবহণের অন্যতম মালিক মামলার বাদী ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়- চাঁদপুর জেলার মতলব (উত্তর) উপজেলার শিকিরচর নয়াকান্দি গ্রামের মৃতঃ হাজী মোঃ মরতুজা’র পুত্র, বর্তমানে মৌলভীবাজার শহরের বাসিন্দা মোঃ আবু সাঈদ কচিসহ উপজেলার ১৬ জন ব্যবসায়ী নির্ধারিত অংকের পুঁজি বিনিয়োগে বিগত ৩ মার্চ ২০২০ সালে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘এমভি জমাদার পরিবহণ’ নামীয় বাল্কহেড জাহাজ (দৈর্ঘ ১১৪ ফুট, প্রস্থ ২৫ ফুট, উচ্চতা ৮ ফুট, ৪.৫ চায়না গিয়ারযুক্ত এফ ২০ সি হিনো ইঞ্জিন, বালু ধারণক্ষমতা ১২ হাজার ফুট) নির্মানপূর্বক ভাড়ায় পরিচালনা করে আসছেন- যার বর্তমান মূল্য ২ কোটি টাকা। একপর্যায়ে চলতি বছরের ১৩ জুন মাসিক ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ভাড়া প্রদানের লিখিত চুক্তিতে আনুসাঙ্গিক মালামালসহ জাহাজটি ১ বছরের জন্য ভাড়া নেয় ভোলা সদরস্থ বাপ্তা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডস্থিত চাচড়া গ্রামের সেরাজল হকের পুত্র মোঃ ইব্রাহিম খোকন। চুক্তিমতে জুন মাসের ভাড়াও পরিশোধ করে। কিন্তু, জুলাই মাসের ভাড়া প্রদানের জন্য আবু সাঈদ কচি গত ১৪ আগষ্ট ফোন করলে ইব্রাহিম খোকন জানায়, ২/৩ দিন আগে চট্টগ্রাম থেকে বালু নিয়ে আসার সময় নোয়াখালী জেলার হাতিয়া দ্বীপের কাছাকাছি স্থানে এক্সিডেন্টে জাহাজটি ডুবে গেছে। এখন সে জাহাজটি খোঁজাখোঁজি করছে। এ খবরে হতবাক আবু সাঈদ কচিসহ জাহাজমালিকরা ইব্রাহিম খোকনের বর্ণিত স্থানে গিয়ে জাহাজ খোঁজাখোঁজি করতে থাকেন। এসময় জাহাজমালিকরা ইব্রাহিম খোকন ও তার ভাইকে ঘটনাস্থলে আসতে বললে তারা আসেনি এবং কোন সহযোগীতাও করেনি। জাহাজমালিকরা ঘটনাস্থলের জেলেদেরকে ও স্থানীয় লোকজনকে ঘটনাস্থলে জাহাজডুবি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা সেখানে কোন জাহাজডুবি সম্পর্কে জানেনা বলে জানায়। এরপর থেকে ইব্রাহিম খোকন জাহাজমালিকদের ফোন আর রিসিভ করেনা। এতাবস্থায় জাহাজমালিকরা গত ২৯ আগষ্ট ইব্রাহিম খোকনের বাড়ীতে গিয়ে জাহাজের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ইব্রাহিম খোকন, তার ভাই লিটন মাঝি, তার পুত্র তানভীর ও তার প্রতিনিধি ফরহাদ জাহাজমালিকদেরকে মারধোর করতে উদ্যত হয় এবং ভোলায় না আসার জন্য খুন-জখমের হুমকী দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এতে জাহাজমালিকরা ধারণা করছেন, ইব্রাহিম খোকন ও তার ভাই লিটন মাঝি জাহাজটি গায়েব করে চট্টগ্রামে অথবা অন্য কোন স্থানে বিক্রি করে দিয়েছে। ফলে, বাধ্য হয়ে জাহাজমালিকদের পক্ষে আবু সাঈদ কচি বাদী হয়ে ইব্রাহিম খোকনসহ উল্লিখিত ৪ জনকে আসামী করে ভোলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা (নং- এম.পি. ৫০৪/২২, দন্ডবিধি ৪০৬/৪২০/৪২৭/৫০৬ (২) ধারা) দায়ের করেন। শুনানী শেষে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জেলা অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, জীবন-জীবিকার অবলম্বন ২ কোটি টাকা মূল্যের জাহাজটি হারিয়ে প্রায় পথে বসতে চলেছেন ওই ১৬ জন জাহাজমালিক। তারা দেশের যেকোন স্থানে ‘এমভি জমাদার পরিবহণ’ বাল্কহেড জাহাজটি কারও নজরে পড়লে বা যে কেউ জাহাজটির খোঁজ পেলে স্থানীয় থানায় অথবা আবু সাঈদ কচিকে (ফোন : ০১৯৭০-৫৮৮৭২৬) জানানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন।