ইশরাত জাহান চৌধুরী, ষ্টাফ রিপোর্টার :: মৌলভীবাজারে নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস ও জাতীয় শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২২। আজ ৩ অক্টোবর সোমবার সকালে জেলা কালেক্টরেট প্রাঙ্গনে মৌলভীবাজার জেলা শিশু একাডেমির আয়োজনে এর শুভ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষ্যে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। পরে মূল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখে শিশুরা।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ জাহিদ আখতার, জেলা তথ্য অফিসার আনোয়ার হোসেন, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা জসীম উদ্দীন মাসুদ, রেডিও পল্লীকন্ঠের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার মেহেদী হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শিশুদের মধ্যে বক্তব্য রাখে নওশিন, তাওফিকা, সাদী, পূর্ণ, উপন্যাস ও কাব্য।
‘গড়বে শিশু সোনার দেশ, ছড়িয়ে দিয়ে আলোর রেশ’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সোমবার (৩ অক্টোবর) সারা দেশে পালিত হবে বিশ্ব শিশু দিবস। ৪ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত পালন করা হচ্ছে শিশু অধিকার সপ্তাহ।
১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করেন। জাতিসংঘ ১৯৮৯ সালে শিশু অধিকার সনদ ঘোষণার ১৫ বৎসর পূর্বে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শিশুদের অধিকার সুরক্ষার জন্য শিশু আইন প্রণয়ন করেন। বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহের কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয়ক্রমে আগামী ০৪ অক্টোবর জাতীয় কন্যা শিশু দিবস উদযাপন করা হবে। এবছর জাতীয় কন্যা শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য: ‘সময়ের অঙ্গীকার,কন্যাশিশুর অধিকার’।
এদিকে উইকিপিডিয়ার এক আর্টিকলে বলা হয়েছে- শিশু দিবস শিশুদের নিয়ে উদযাপিত একটি দিবস। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় পালিত হয়ে থাকে। শিশু দিবসটি প্রথমবার ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল তুরস্কে পালিত হয়েছিল। বিশ্ব শিশু দিবস ২০ নভেম্বর-এ উদযাপন করা হয় এবং আন্তর্জাতিক শিশু দিবস জুন ১ তারিখে উদযাপন করা হয়। তবে বিভিন্ন দেশে নিজস্ব নির্দিষ্ট দিন আছে শিশু দিবসটিকে উদযাপন করার।
এদিকে ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর বিশ্বনেতারা শিশু অধিকার বিষয়ে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়ন করেন। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে অনুমোদিত মানবাধিকার চুক্তি। শিশু অধিকার সনদের আলোকে শিশুদের জন্য এবং শিশুদের নিয়ে বিশ্বব্যাপী ইউনিসেফ বিশ্ব শিশু দিবস পালন করে। এই দিনে ইউনিসেফ শিশুদের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলো সমাধানে সমর্থন আদায় করে, শিশু অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ায় এবং প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করে।
ইউনিসেফের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উদ্যাপিত এই বিশ্ব শিশু দিবসে, শিশুরা তাদের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন বিষয়গুলো নিয়ে সোচ্চার হবে এবং তাদের অধিকারের সমর্থনে প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। কারণ, আজও প্রতিটি শিশু তাদের পূর্ণ শৈশব উপভোগ করতে পারে না। অনেকের শৈশবই ক্ষণস্থায়ী। কোভিড-১৯-এর প্রভাব শিশুদের শিক্ষা, পুষ্টি ও সার্বিক কল্যাণের ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ২০২০ সালের প্রথম দিকে এই মহামারি শুরুর পর থেকে স্কুল বন্ধের কারণে বাংলাদেশের ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশু এবং সমগ্র এশিয়া মহাদেশের প্রায় ৮০ কোটি শিশুর শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য, বৈষম্য, সংঘাত, জলবায়ু বিপর্যয় এবং কোভিড-১৯-এর মতো জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সীদের মধ্যে একটি চলমান পুষ্টিসংকট তৈরি করছে। বাংলাদেশে ৬-২৩ মাস বয়সী প্রতি তিনজনের মধ্যে মাত্র একজন শিশুকে ন্যূনতম সুপারিশকৃত পুষ্টি দেয়া যাচ্ছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে ১৭ লাখ শিশু শ্রমে নিয়োজিত ছিল। বিশ্বব্যাপী শিশু শ্রমিকের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৬ কোটিতে। গত ৪ বছরেই ৮৪ লাখ শিশু যোগ হয়েছে। কোভিড-১৯-এর প্রভাবের কারণে আরও লক্ষাধিক শিশু ঝুঁকিতে আছে।
উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্তেও বাংলাদেশে শিশুবিবাহের হার এখনও আশঙ্কাজনক। ৫১ শতাংশ নারী, যাঁদের বয়স বর্তমানে ২০-২৪ বছর, তাঁদের বিয়ে হয়েছিল শিশু বা বাল্যকালে। চলতি দশকের শেষে বিশ্বব্যাপী ১ কোটি অতিরিক্ত শিশুবিবাহ হতে পারে- যা এই প্রথা বন্ধে চলমান অগ্রগতির প্রতি হুমকিস্বরূপ। সরকার, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের নেতৃস্থানীয়রা শিশু অধিকারের ক্ষেত্রে তাদের প্রতিশ্রুতি অনতিবিলম্বে পূরণ করবে, এটিই শিশুদের প্রত্যাশা। বড়দের নিশ্চিত করতে হবে যেন প্রতিটি শিশুই তাদের পূর্ণ অধিকার ভোগ করে।