ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ আর নেই

ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ আর নেই

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ আর নেই। বাকিংহাম প্যালেস লন্ডনের স্থানীয় সময় ৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বিবৃতি দিয়েছে। মৃত্যুকালে ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় সিংহাসন অলংকৃত করে রাখা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। তার সিংহাসনে আরোহনের ৭০ বছর উদযাপন করা হয়েছিল কয়েক মাস আগে।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ বেশ কিছুদিন যাবৎ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। হাঁটাচলা ও দাঁড়িয়ে থাকতে সমস্যা হচ্ছিল তার। এর মধ্যে গত ৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার লিজ ট্রাস যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ পেতে স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসলে রানীর কাছে যান। ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রথা ভেঙে এটা করা হয়। সাধারণত রানী লন্ডনে থাকেন এবং সেখানে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন হবু প্রধানমন্ত্রীরা। কিন্তু, সম্প্রতি রানীর হাটাচলায় সমস্যা হওয়ায় লিজ ট্রাসকে বালমোরালে যেতে হয়। এরপরও বালমোরাল ক্যাসলে অবস্থান করছিলেন রানী। বৃহষ্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার পর বাকিংহাম প্যালেসের এক বিবৃতিতে রানীর অসুস্থ্যতার কথা জানানো হয়। বলা হয়, তিনি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছেন। রানীর অসুস্থ্যতার খবরে স্কটল্যান্ডে ছুটে যান রাজপরিবারের সদস্যরা। বালমোরাল ক্যাসলে রানীর পাশে উপস্থিত হন তার ৪ সন্তান প্রিন্স চার্লস, প্রিন্সেস অ্যানে, প্রিন্স অ্যান্ড্রু ও প্রিন্স এডওয়ার্ড। নাতি প্রিন্স উইলিয়াম এবং প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগানও সেখানে ছুটে যান।
ব্রিটিশ সিংহাসনে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেক ঘটে ১৯৫২ সালে। তার অসুস্থ্যতার খবরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার সুস্থ্যতা কামনা করে বার্তা দিয়েছিলেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস বলেছিলেন, রানীর অসুস্থ্যতার খবরে পুরো দেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। রানীর অসুস্থ্যতার খবরে লন্ডনে বাকিংহাম প্যালেসের সামনে লোকজন জড়ো হতে শুরু করেন। সেখানে উপস্থিত পর্যটকদের কারও কারও চোখে পানি দেখা যায়। সমারসেট থেকে লন্ডনে ঘুরতে যাওয়া সু ও অ্যান্ডি অলডারম্যান খবরটি শুনে মুষড়ে পড়েন। তারা আশা করছিলেন, অচিরেই রানীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে ভালো খবর পাবেন। অস্ট্রেলিয়া থেকে যাওয়া পাম ফ্লেমিং ও কিম টিয়েরনি বাকিংহাম প্রাসাদ ঘুরে দেখার সময় রানীর অসুস্থ্যতার খবর পান। পাম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, রানী হিসেবে আমরা শুধু তাকেই পেয়েছি। তিনি একজন অসাধারণ নারী। এটা খুব কষ্টের খবর।
বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক, আলোকচিত্রী ও ক্যামেরা ক্রুরাও বাকিংহাম প্রাসাদের সামনে হাজির হন। সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর পূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষ্যে মাত্র কয়েক মাস আগে এ প্রাসাদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়িয়ে জনতার অভিবাদনের জবাব দিয়েছিলেন রানী। ব্রিটিশ রাজপরিবারের জীবনী লেখক রবার্ট হার্ডম্যান বলেছিলেন, ‘রানীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে এ খবর দেশের জন্য তার গুরুত্ব এবং তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।’ কুইন অব আওয়ার টাইমস গ্রন্থের লেখক হার্ডম্যান আরও বলেন, তিনি আমাদের ইতিহাসে অন্য যেকোনো রাজা–রানীর চেয়ে ভিন্ন। তিনি আমাদের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী, সবচেয়ে বেশি সময় দায়িত্ব পালনকারী, সবচেয়ে বেশি সময় সিংহাসনে থাকা রানী।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন। পৃথক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এ শোক জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *