সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডস্থিত রামচন্দ্রপুর গ্রামে উজির মিয়ার দোকানে বুলবুল আহমদ ওয়াতির (মেম্বার) ও তার সহযোগীদের হামলায় নয়, টানা-হেচরাকালে নিজ হাতুরীর বাট মাথায় লেগে আহত হন আব্দুল খালিক। এর আগে একইভাবে আব্দুল খালিকের হাতুরীর বাট হাতে লেগে আহত হন দোকানদার উজির মিয়া। এসময় সেখানে অনেক লোক উপস্থিত ছিলেন এবং তারা উভয়কে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। অং খালিক এ ঘটনায় বুলবুল আহমদ ওয়াতির (মেম্বার) ও নজির মিয়ার বিরুদ্ধে মৌলভীবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৩নং আমল আদালতে সি.আর ২০১/২২ইং (কমল) মামলা দায়ের করেছেন।
সরেজমিন ঘটনাস্থল রামচন্দ্রপুর (ঘাটের বাজার) উজির মিয়ার দোকান ও আশপাশ এলাকা ঘুরে জালাল মিয়া, হাবিবুর রহমান, খাজা মিয়া, চা দোকানদার ও আহত উজির মিয়া, মামলার ২নং আসামী নজির মিয়া, আং খালিককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া শাহান মিয়া, আব্দুল আজিজ, শরিফুল ইসলাম, আমিন হোসেন, আব্দুল আজিজ, শরিফুল ইসলাম, আমিন হোসেন, লাল মিয়া, মানিক মিয়া, আজির উদ্দিন, আজিজ মিয়া, শরিয়ত মিয়া প্রমুখসহ প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন লোকজনের সাথে সরাসরি এবং ফোনে কথা বলে জানা গেছে- আব্দুল খালিক গত ২৭ জুন দুপুরে উজির মিয়ার চা দোকানের বারান্দায় বসে চায়ের অর্ডার দেন। এর কিছুক্ষণ পর ওয়াতির মেম্বার ওই চা দোকানের সামনের রাস্তা দিয়ে যাবার কালে আং খালিককে দেখে কাছে গিয়ে বলেন- ওবা খালিক ভাইছাব, আমার ৩৫ হাজারটা টেকা দেওনা কেনে বা ? (ও খালিক ভাইসাহেব, আমার ৩৫ হাজার টাকা দেননা কেন ?) আমার টেকাগুন কোনদিন দিতায় বা ? (আমার টাকাগুলি কবে দিবে ?) এতে আং খালিক উত্তেজিত হয়ে বলেন- এই, বেকায়দামী করিছনা (এই, বেয়াদবী করিসনা)। তুই আমারটাই কিওর বালর টেকা পাইতে রে (তুই আমার কাছে কিসের বালের টাকা পাবি রে) ? আং খালিকের উত্তেজনাপূর্ণ ও অশালীন কথাবার্তার জেরে শুরু হওয়া উভয়ের মধ্যেকার বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে আং খালিক তার কোমড়ে থাকা হাতুরী বের করে ওয়াতির মেম্বারকে আঘাত করার চেষ্টা করেন (আং খালিক সবসময় কোমড়ে হাতুড়ী নিয়ে চলাফেরা করেন) । আং খালিককে নিবৃত্ত করতে ও তার হাত থেকে হাতুরী ছাড়িয়ে নিতে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে প্রথমে নজির মিয়া তাকে ঝাপটে ধরেন। এজন্যে নজির মিয়াকেও আঘাত করার চেষ্টা করেন আং খালিক। এমতাবস্থায়, উপস্থিত লোকজনের একাংশ ওয়াতির মেম্বারকে নিবৃত্ত করে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। উপস্থিত লোকজনের আরেকাংশ আং খালিককে নিবৃত্ত করার ও তার হাত থেকে হাতুরী ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে টানা-হেচড়া শুরু হয়। কিন্তু, আং খালিকের হাত থেকে হাতুরী ছাড়িয়ে নেয়া যাচ্ছিলোনা। এসময় অসাবধানতা বশতঃ হাতুরীর বাটের আঘাতে সর্বপ্রথম আহত হন চা দোকানদার উজির মিয়া। এরপর একইভাবে হাতুরীর বাটের আঘাতে আহত হন আং খালিক নিজে। তখনও হাতুরীটি আং খালিকের হাতেই ধরা ছিলো। পরে আং খালিককে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান প্রত্যক্ষদর্শী শাহান মিয়া (প্রতিবন্ধী)। দোকানদার উজির মিয়াও একই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা নেন। আং খালিক চিকিৎসাধীন থেকেই ওয়াতির মেম্বার ও নজির মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সবাই বলেছেন- কেউই কাউকে হামলা করেননি এবং কারো কাছেই দা ও লোহার রড ছিলোনা। টানা-হেচরাকালে অসাবধানতা বশতঃ নিজেরই হাতুরীর বাটের আঘাতে আং খালিক জখম হয়েছেন। একইভাবে একই হাতুরীর বাটের আঘাতে চা দোকানদার উজির মিয়াও আহত হয়েছেন। তবে, ওয়াতির মেম্বার পাওনা টাকা চাওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে তা সত্যি। আর, এজন্য দায়ী আং খালিক নিজেই।
অভিযুক্ত ওয়াতির মেম্বার বলেন- এলাকার সবাই জানেন জুয়া খেলা, ঘুষ খেয়ে সালিশ করা, পাওনা টাকা চাইলে পাওনাদারকে হয়রানী করা ইত্যাদি আং খালিকের নৈমিত্তিক ব্যাপার। আমি ও আং খালিক দুজন সম্পর্কেই এলাকার লোকজনই ভালো জানেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকার লোকজনের বক্তব্যই আমার বক্তব্য। আমি আর কিছু বলতে চাইনা। ভূক্তভোগী আং খালিক বাদ মাগরিব কথা বলবেন বলে জানালেও, বাদ মাগরিব থেকে তার ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি। তবে, আং খালিকের ভাতিজা সাংবাদিক আব্দুল বাছিত খান বলেছেন- আং খালিকের কাছে ওয়াতির মেম্বারের কোন টাকা পাওনা নাই। এ বিষয়ে আং খালিক ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে বিচারও দিয়েছেন। বিষয়টি বিচারাধীন থাকা সত্তেও ওয়াতির মেম্বার টাকা চেয়ে আং খালিকের কলারে ধরেছেন। এর প্রতিবাদ করায় কাঠের কিছু একটা দিয়ে আং খালিকের মাথায় আঘাত করে আহত করেছেন।