সুরমার ঢেউ সংবাদ :: ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে ৩০ জুন বৃহস্পতিবার। অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণ এবং মহামারির দুই বছর পেরিয়ে উন্নয়নের হারানো গতি ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় নিয়ে আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাচ্ছে নতুন অর্থবছর। বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন ছাড়াই কণ্ঠভোটে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। ৩০ জুন বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে কণ্ঠভোটে এ বাজেট পাস হয়। এর আগে বিকেল ৩টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।
সংসদে পাস হওয়া এ বাজেট রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে (শুক্রবার, ১ জুলাই) কার্যকর হবে। গত ৯ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রীর বাজেট পেশের পর পুরো অধিবেশন জুড়ে এর ওপর আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। মহামারিকালে গত দুই বছরের চেয়ে এবারের বাজেট অধিবেশন ছিল দীর্ঘ। বাজেট নিয়ে আলোচনাও হয়েছে গত ২ বছরের তুলনায় অনেক বেশি সময় ধরে। এর আগে ২০২০ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত বাজেট অধিবেশন হয়েছিল। নয় দিনের ওই বাজেট অধিবেশনে ১৮ জন সংসদ সদস্য বাজেট নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। অর্থমন্ত্রীর বাজেট উত্থাপনের পর গত ১৩ জুন বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ১৭ হাজার ৫২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৫ হাজার টাকার সম্পূরক বাজেট সংসদে পাস হয়েছে। কয়েকজন সংসদ সদস্যের সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের মধ্য দিয়ে বুধবার সংসদে অর্থবিল পাস হয়।
এক নজরে নতুন বাজেট :
কোভিড মহামারির পর ইউক্রেইন যুদ্ধের কঠিন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে উন্নয়নের হারানো গতিতে ফেরার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেট বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) চেয়ে ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। টাকার ওই অঙ্ক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশের সমান।
গত বছরের তুলনায় বাজেটের আকার জিডিপির অনুপাতে কিছুটা কমলেও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন অর্থমন্ত্রী। অন্যদিকে সারাবিশ্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও অভ্যন্তরীণ সরবরাহে বিশঙ্খলার মধ্যেও মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার আশা করছেন তিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ১১.৩১ শতাংশ বেশি।
এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন কামাল। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১২ শতাংশের মতো। এই অংক মোট বাজেটের ৫৪ দশমিক ৫৬ শতাংশের মতো। গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ১ লাখ ৪১ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। এই অংকও বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশের মতো। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা।
আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ২১ হাজার ২০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৪৩ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৫৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৬৩ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৪ হাজার ১২৭ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের শুরুতেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মঞ্জুরি দাবিতে আলোচনা করার কথা জানান। বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা এসব দাবিতে আলোচনা করেন। আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের বাইরে সরকারের বিভিন্ন ধরনের সংযুক্ত দায় মিলিয়ে মোট আট লাখ ৮৩ হাজার ৭৫১ কোটি ৮১ লাখ ৯৭ হাজার টাকার নির্দিষ্টকরণ বিল জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে। এর মধ্যে, সংসদ সদস্যদের ভোটে গৃহীত অর্থের পরিমাণ ছয় লাখ ১৮ হাজার ৮২৫ কোটি ৪৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এবং সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায় দুই লাখ ৬৪ হাজার ৯২৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সংযুক্ত তহবিলের দায়ের মধ্যে ট্রেজারি বিলের দায় পরিশোধ, হাইকোর্টের বিচারপতি ও মহাহিসাব নিরীক্ষক-নিয়ন্ত্রকের বেতনও অন্তর্ভুক্ত। আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও স্বতন্ত্রসহ মোট ১৩ জন সংদ সদস্য ৬৬৪টি বিভিন্ন ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন।
এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। বিরোধী দলের আলোচনার পর সবগুলো প্রস্তাব কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির অনুপস্থিতিতে তাদের মঞ্জুরি দাবি তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো দেন, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবল হক চুন্নু, ফখরুল ইমাম, রওশন আরা মান্নান, পীর ফজলুর রহমান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, রুস্তম আলী ফরাজী, পনির উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির হারুনুর রশীদ, রুমিন ফারহানা, মোশাররফ হোসেন, গণফোরামের মোকাব্বির খান এবং স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু।