সুরমার ঢেউ সংবাদ :: সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন চা শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দকৃত লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে মৌলভীবাজারে রাজনগরের এক কর্মকর্তার উপর।
হঠাৎ করে গত শনিবার থেকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সবুজবাগ, হবিগঞ্জ সড়কসহ বেশ কিছু মানুষের মোবাইলে ৫ হাজার ৩৯ টাকা করে বিকাশ আসতে শুরু করে। আর বিকাশ আসার পর পরই শ্রীমঙ্গল হবিগঞ্জ রোডের সেলুন কাম বিকাশ ব্যবসায়ী ঝুমুর বৈদ্য তাদের কাছে গিয়ে বলেন, তার বিকাশ কোম্পানীর টাকা ওই নাম্বারে চলে গেছে। তাদের নাম্বারে ফরওয়ার্ড করে দিতে। অনেকে দিয়েছেন কেউ কেউ গড়িমসি করেন। এতে ঝুমুরের সাথে শুরু হয় বচসা।
একসাথে অনেক মানুষের মোবাইলে বিকাশ গেলে বিষয়টি নিয়ে অনেকের সন্দেহ হয়। এ সময় সকলের চাপে ঝুমর বৈদ্য জানান, রাজনগর উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে কর্মরত উপজেলা চেয়ারম্যানের সিএ অনুপ দাশ তার কাছে কিছু নাম্বার চান যে নাম্বারে ৫ হাজার করে টাকা আসবে বলে জানান। না হলে তার টাকা গুলো মার যাবে। ঝুমুর রাজী হয়ে প্রায় বেশ কিছু মানুষের নাম্বার সংগ্রহ করে দেন। তারা দুজন মিলে সবুজবাগ ও হবিগঞ্জ সড়কের প্রায় ৩৬ জনের মোবাইল নাম্বার দেন । পরবর্তীতে গত শনিবার থেকে এই নাম্বার গুলোতে ৫ হাজার ৩৯ টাকা করে আসতে শুরু করে।
শ্রীমঙ্গল সবুজবাগ আবাসিক এলাকার দেব দুলাল চক্রবর্তী জানান, তার মোবাইল নাম্বারে ৫ হাজার ৩৯ টাকা বিকাশ আসে। পরে বিকাশ ব্যবসায়ী ঝুমুর বৈদ্য তাকে ফোন করে জানায় তার বিকাশের একটি প্রেমেন্ট তার মোবাইল নাম্বার আনিয়েছে তার নাম্বারে ফরওয়ার্ড করে দিতে।
একই ভাবে ঝুমুরের পাশের আরেক বিকাশ ব্যবসায়ী শুভ ভট্টাচার্য্য জানান, তার মোবাইলেও ৫ হাজার ৩৯ টাকা আসে। ঝুমুর তাকে ফেরত দিতে বলে। তিনি তা দিতে একটু বিলম্ব করেন। এ সময় বেশ কয়েকজন গাড়ী চালক তাদের মোবাইলে বিকাশের একই ম্যাসেজের নিয়ে টাকা তুলতে যায়। তখনই বিষয়টি সন্দেহে আসে। পরে তারা সবাই মিলে ঝুমুর বৈদ্যের কাছে গেলে ঝুমুর রাজনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সিএ অনুপ দাশের নাম বলে। অনুপ দাশের অনুরোধে এই কাজ করছে।
শুভ ভট্টাচার্য্য বলেন, তিনি ঝুমুরের কাছ থেকে সে টাকা আর তার মোবাইলে ফেরত আনেন। প্রকৃত মালিক যখন তার কাছে ফেরত চাইবে তখন ফেরত দিবেন। একই কথা জানান, টাকা পাওয়া অনান্যরাও।
টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করেন শ্রীমঙ্গল সবুজবাগের অসীম দাশ, হবিগঞ্জ সড়কের মোবারক মিয়া ও সুমন মিয়াসহ আরো অনেকে। টাকাপ্রাপ্তদের মোবাইলের ম্যাসেজে দেখা যায়, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয় থেকে বরাদ্ধকৃত ৫ হাজার টাকার জন্য চা শ্রমিকদের মোবাইলে যে মেসেজ যাচ্ছে এটিও অনুরুপ।
এ ব্যাপারে অনুপ দাশকে বার বার ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তার অফিসে সাংবাদিকরা গেলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার সমাজসেবা অধিদপ্তরের হিসাব রক্ষক মো: আবুল কাশেম জানান, মৌলভীবাজার জেলায় ২৮ হাজার ৫শত ৪৯ জন চা শ্রমিকদের জন্য তাদের জীবন মান উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা করে বিশেষ বরাদ্দ ছাড় দিয়েছেন।
এ ব্যপারে রাজনগর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা প্রকাশ চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার অফিস থেকে ৪ হাজার ১০ জন চা শ্রমিকের জন্য ৫ হাজার টাকা করে প্রেরণ করা হয়েছে। আর এই লিস্ট তৈরী করে দিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, চা বাগান সভাপতি ও বাগান পঞ্চায়েত। তাদের স্বাক্ষর করা লিস্টেই তারা টাকা ছেড়েছেন। এ সময় যে সকল বিকাশ নাম্বারে টাকা এসেছে এরকম কিছু মোবাইল নাম্বার তাঁকে দিলে তিনি তার লিস্ট চেক করে ওই নাম্বার গুলো তাদের লিস্টে নেই বলে জানান।
এ ব্যাপারে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা পালের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এরকম কোন অভিযোগ তিনি পাননি। সাংবাদিকের মাধ্যমে আজই জেনেছেন। বিষয়টি দেখার জন্য তিনি সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বলেছেন।
এদিকে রাজনগর উপজেলায় চা শ্রমিকদের বরাদ্ধকৃত নামের তালিকায় এই নামগুলো না থাকায় এটি কোন উপজেলার চা শ্রমিকদের টাকা এ চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে, এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই টাকা কোন না কোন এলাকারতো অবশ্যই হবে। আমি বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।