মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজার জেলার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উদ্যোগে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ম্যাজিস্ট্রেসি-পুলিশ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে ১১ জুন শনিবার সকাল ১০টা হতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান-এর সভাপতিত্বে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উক্ত কনফারেন্সে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায়; বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ার; বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জগলুল হক, বেগম মুমিনুন্নিসা খানম, সাইফুর রহমান, মোহাম্মদ দাউদ হাসান ও বেগম হোসনে আরা বেগম, বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম. মিজবাহ উর রহমান ও মোহাম্মদ জিয়াউল হক. বিজ্ঞ সহকারী জজ মুমিনুল হক, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী; জেলা আইনজীবী সমিতির বিজ্ঞ সভাপতি এ.এস.এম আজাদুর রহমান, বিজ্ঞ অতিরিক্ত পিপি কৃপাসিন্ধু দাশ, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাঃ আহমদ ফয়সাল জামান, জেল সুপার, সহকারী পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন বিভাগ, সিলেট-এর প্রতিনিধি রেঞ্জ কর্মকর্তা, কোম্পানি কমান্ডার র্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প-এর প্রতিনিধি ডিএডি. সেক্টর কমান্ডার বিজিবি সদর দপ্তর শ্রীমঙ্গল-এর প্রতিনিধি, সহকারী পরিচালক পরিদর্শক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক, পিবিআই-এর প্রতিনিধি ইন্সপেক্টর, সিআইডি-এর প্রতিনিধি ইন্সপেক্টর এবং জেলার বিভিন্ন থানা ও গোয়েন্দা শাখার ওসিগণ উপস্থিত ছিলেন।
কনফারেন্সের শুরুতে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান-এর সদয় অনুমতিক্রমে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ার। তিনি কনফারেন্সে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনক্রমে তিনি তাঁর স্বাগত বক্তব্যে মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মামলার বিবরণ ও বিভিন্ন থানার মূলতবী পরোয়ানার বিবরণ তুলে ধরেন। আদালতে সাক্ষীর উপস্থিতির হার ইত:পূর্বেকার চেয়ে অধিক হওয়ায় বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটগণসহ উপস্থিত সকলে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে, এনইআর প্রেরণ না করায় এবং সময়সীমা নির্ধারিত এরূপ মামলায় যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায় তাঁর বক্তব্যে সাক্ষীর প্রতি ইস্যুকৃত অতামিলকৃত প্রসেসের এনইআর আদালতে প্রেরণ এবং সময়সীমা নির্ধারিত এরূপ মামলার ক্ষেত্রে যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল কিংবা আইনানুযায়ী বিলম্বের কারণ আদালতকে অবহিত করার জন্য ওসিগণকে নির্দেশ প্রদান করেন।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাঃ আহমদ ফয়সাল জামান লাশ চালান ফরোয়ার্ডিং-এ থানা থেকে হাসপাতালে প্রেরণের সময় উল্লেখ করার জন্য ওসিগণের এবং জেলা আইনজীবী সমিতির বিজ্ঞ সভাপতি এ.এস.এম আজাদুর রহমান আজাদ তাঁর বক্তব্যে জখমীর চিকিৎসা সংক্রান্ত হাসপাতালের টিকেট/স্লীপে জখমের স্থান উল্লেখ করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান পুলিশ বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা আইনজীবী সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং জেলার বিভিন্ন থানায় তদন্তাধীন থাকা মামলার তদন্তকার্য দ্রুততা ও দক্ষতার সাথে আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ, যথাসময়ে মামলার সাক্ষী উপস্থাপন নিশ্চিত করতে তাদের নিরাপত্তা বিধান, গ্রেফতারের পর আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে সোপর্দ করার, পরোয়ানা জারির ক্ষেত্রে আরও তৎপর হওয়ার, নিষ্পত্তির নিমিত্তে পি.আরমূলে জব্দ থানা মালখানায় থাকা আলামতের তালিকা তৈরি করে আদালতে প্রেরণ ও মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন মামলাসমূহের সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য বিচারক ও থানার অফিসার ইনচার্জসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। এছাড়াও, বক্তাগণ দ্রুত গ্রেফতারী পরোয়ানা, হুলিয়া, ক্রোকী পরোয়ানা তামিল ও সমন জারির ব্যবস্থা গ্রহণ; তদন্ত কার্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান, তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার ও হয়রানী বন্ধ; লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট ও মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদানের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন; নকলখানা হতে স্বল্পতম সময়ে নকল সরবরাহের ব্যবস্থা করা; মামলার আলামত সংরক্ষণ ও সঠিক নিয়মে নিষ্পত্তি; মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও নিষ্পত্তিকৃত নথি দ্রুত রেকর্ডরুমে প্রেরণ; আদালত ও বিচার সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ নানাবিধ বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামতসমূহ কনফারেন্সে তুলে ধরেন।
বিভিন্ন থানা থেকে আগত ওসিসহ অন্যান্য উপস্থিতি কর্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন সমস্যার আইনি সমাধান, প্রশ্নোত্তর প্রদান এবং পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করত: সমাপনী বক্তব্যে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বলেন, ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় বিচার প্রশাসন, নির্বাহী প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ একে অপরের পরিপূরক। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তরিকতা ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে একযোগে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে বিচার প্রার্থী মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কারও অবহেলা কাম্য নয়। সামনের দিনগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর পারষ্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় আরো গতিশীলতা আসবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।