সুরমার ঢেউ সংবাদ :: জাতিসংঘে বাংলাদেশের পরবর্তী স্থায়ী প্রতিনিধি কে হচ্ছেন ? গুরুত্বপূর্ণ ওই পদ নিয়ে অন্তহীন জল্পনা-কল্পনা সেগুনবাগিচায়। মন্ত্রী-সচিবসহ দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা মুখ খুলছেন না। তারা এ নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক। ওয়ার্কিং লেভেলে নানা স্পেকুলেশন, কিন্তু কেউই কোনো কনক্লুশনে পৌঁছাতে পারছেন না। বর্তমান স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এরইমধ্যে জাতিসংঘে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। সরকারের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের গ্রিন সিগন্যাল নিয়েই জাতিসংঘের উচ্চ পদে চাকরির আবেদন করেন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ ওই নারী কূটনীতিক। সুতরাং নতুন দায়িত্বে তার যোগদান এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ অবস্থায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির ভবিতব্য শূন্য পদে কে নিয়োগ পাচ্ছেন ? তা নিয়ে গুঞ্জন চরমে।
ওই পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যার নামটি সবার মুখে মুখে তিনি হলেন লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম। মল্টিলেটারাল এক্সপার্ট খ্যাত ওই তারকা ডিপ্লোমেট সাড়ে ৩ বছর ধরে বৃটেনের মতো সেনসেটিভ মিশনে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৮ সালে লন্ডন বিএনপি’র বিক্ষোভ এবং স্মারকলিপি প্রদানকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ হাইকমিশনে হট্টগোলের প্রেক্ষাপটে জরুরি ভিত্তিতে থাইল্যান্ড থেকে মুনাকে বৃটেনে পাঠানো হয়েছিল। লন্ডন মিশনের প্রধান থেকে শুরু করে মালি-বাবুর্চি অবধি সবক’টি পদেই সেই সময় পরিবর্তন আনা হয়েছিল। পররাষ্ট্র ক্যাডারের দশম ব্যাচের কর্মকর্তা মুনা থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হওয়ার আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার অনুবিভাগ সামলেছেন।
বেশ কদিন ধরে রুটিন কনসালটেশনে ঢাকায় অবস্থান করা সাঈদা মুনা তাসনিমকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে সিরিজ বৈঠক করে চলেছেন। সেইসব বৈঠকে তার পোস্টিং নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা ? বা তিনি জাতিসংঘে যেতে তার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন কিনা ? বা করলেও ফল কি হয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। ওয়াকিবহাল সূত্রের মতে, ‘বিউটি উইথ ব্রেইন’ খ্যাত মুনা তাসনিমকে লন্ডন থেকে এই মুহূর্তে সরানোর সম্ভাবনা কম। কারণ ‘লন্ডনে মুনা ভালো করছেন’ সরকারের উচ্চ মহলে এমন প্রশংসা রয়েছে। তাছাড়া আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনের পূর্বে পররাষ্ট্র সচিব পদে সম্ভাব্য পরিবর্তন বিবেচনায়ও (পরবর্তী পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে) মুনা সরকারের নীতি নির্ধারকদের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। ওই সূত্রের দাবি- সেক্ষেত্রে মুনাকে নিউইয়র্কে পাঠানো না হলে দশম ব্যাচের অপর মেধাবী ও চৌকস কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আব্দুল মুহিতকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের পরবর্তী স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে।
এম এ মুহিত বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় বাংলাদেশের (আবাসিক) রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন। অনাবাসী দূত হিসেবে তিনি হাঙ্গেরি, স্লোভেনিয়া এবং স্লোভাকিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দেখভাল করা ছাড়াও ভিয়েনাস্থ জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন। ভিয়েনায় নিয়োগের আগে মুহিত ডেনমার্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। মূলত তার হাত দিয়েই যাত্রা শুরু হয় ডেনমার্কের বাংলাদেশ মিশনের। ১৯৯৩ সালে ফরেন সার্ভিসে আসা মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সন্তান মুহিত তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন, কুয়েত, রোম ও দোহায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসাইমেন্ট করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি আমেরিকাস অনুবিভাগ সামলানো ছাড়াও বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।