দীর্ঘ ১১ বছর পর দেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি ও গৃহগণনা

দীর্ঘ ১১ বছর পর দেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি ও গৃহগণনা

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: দীর্ঘ ১১ বছর পর ১৫ জুন থেকে শুরু হলো কাঙ্ক্ষিত ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’। সপ্তাহব্যাপী এ শুমারি চলবে ২১ জুন পর্যন্ত। এটি দেশের ৬ষ্ঠ জনশুমারি। এবার প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি পরিচালিত হবে। দেশের মোট জনসংখ্যা এখন কত, তা জানতেই মূলত রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল, বাসস্ট্যান্ডসহ দেশে এ ধরনের স্থানগুলোতে ভাসমান মানুষ গণনাসহ তাদের সম্পর্কে মৌলিক জনমিতিক, আর্থ-সামাজিক ও বাসগৃহসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের মধ্যদিয়ে শুরু হবে জনশুমারি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) আওতায় এ শুমারির মূল তথ্যসংগ্রহ শুরুর আগে সার্বিক বিষয়ে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন চত্বরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন এ সংক্রান্ত সার্বিক বিষয় উপস্থাপনা করেন।
এদিকে ‘শুমারি সপ্তাহ’ হিসেবে ১৪ জুন দিবাগত রাত ১২টা (শূন্য মুহূর্ত ১৫ জুন)-কে ‘শুমারি রেফারেন্স পয়েন্ট/সময়’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর মাধ্যমে দেশের সব সাধারণ খানা, প্রাতিষ্ঠানিক খানা ও বস্তি খানা, ভাসমান/ছিন্নমূল জনগোষ্ঠী, খানার বাসগৃহের সংখ্যা ও ধরন, বাসগৃহের মালিকানা, খাবার পানির প্রধান উৎস, টয়লেট সুবিধা, বিদ্যুৎ সুবিধা, রান্নার জ্বালানির প্রধান উৎস, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, বৈদেশিক রেমিট্যান্স ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া গণনাকারীরা খানায় বসবাসরত সদস্যদের জনতাত্ত্বিক ও আর্থসামাজিক তথ্য যেমন- বয়স, লিঙ্গ, খানাপ্রধানের সঙ্গে সম্পর্ক, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্ম, প্রতিবন্ধীতা, শিক্ষা, কর্ম, প্রশিক্ষণ, মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার, ব্যাংক/মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, জাতীয়তা, নিজ জেলা ইত্যাদি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
এবারের শুমারিতে ডিজিটাল ডিভাইস ট্যাবলেট ব্যবহার করে কম্পিউটার অ্যাসিসটেড পার্সনাল ইন্টারভিউং (সিএপিআই) পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। সহজে ও সুনির্দিষ্টভাবে শুমারির গণনা এলাকা চিহ্নিতকরণ এবং কোনো খানা গণনা থেকে বাদ না পড়া বা একাধিকবার গণনা না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ও গুগল সমন্বয় করে ডিজিটাল ম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ম্যাপ ব্যবহার করে সাময়িকভাবে নিযুক্ত গণনাকারীরা প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার নির্ধারিত গণনা এলাকার প্রতিটি বাসগৃহ, খানা ও ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করবেন। মূল শুমারির প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে এরই মধ্যে মাঠপর্যায়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় জোনাল অপারেশন সম্পাদন করা হয়েছে। শুমারির তথ্য সংগ্রহের জন্য গড়ে ১০০টি খানা নিয়ে একটি গণনা এলাকা গঠন করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি গণনা এলাকার জন্য একজন গণনাকারী এবং ৫ -৬ জন গণনাকারীর জন্য একজন সুপারভাইজার নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যারা স্থানীয় শিক্ষিত যুবক-যুবমহিলা। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এ দেশের সব জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচার কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছেন। প্রচারের অংশ হিসেবে শুমারি চলাকালীন টিভি স্ক্রলিং দেওয়া হবে। ডকুড্রামা, জিঙ্গেল ইত্যাদি টেলিভিশন ও বেতারে সম্প্রচারের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে নিয়মিত প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য- স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জনশুমারি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালে। ২য় জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। দশ বছর পর‌্যাবৃত্তি অনুসরণপূর্বক দেশের ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম জনশুমারি ও গৃহগণনা যথাক্রমে ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয়। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের ন্যায় ৬ষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনায় ১০ বছর পর‌্যাবৃত্তি অনুসরণপূর্বক ২০২১ সালে পরিচালনা করা সম্ভব না হলেও মূল শুমারির তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম ১৫-২১ জুনে পরিচালনা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *