ই-গেট সুবিধা চালু হলো বাংলাদেশের বিমানবন্দরেও

ই-গেট সুবিধা চালু হলো বাংলাদেশের বিমানবন্দরেও

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও ই-পাসপোর্টধারীদের জন্য চালু হলো দুবাইর মতো আধুনিক ই-গেট সুবিধা। যার মাধ্যমে অল্প সময়েই ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে পারবেন ই-পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। ৭ জুন মঙ্গলবার বিমানবন্দরে ই-গেটের কার্যক্রম চালু করা হয়। ই-গেট পার হতে একজন যাত্রীর ১৫-২০ সেকেণ্ড লাগছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে বিমানবন্দরে ১৫টি ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে ১২টি বহির্গমন এলাকায় এবং আগমনী এলাকায় ৩টি। বিমানবন্দরে ই-গেট ১১ মাস আগেও উদ্বোধন হলেও নানা জটিলতার কারণে কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। তবে এখন কোনো জটিলতা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও ই-গেট পার হলেও আগের মতোই পুলিশ ইমিগ্রেশনের মধ্য দিয়েই যেতে হবে। বাংলাদেশে ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ জানিয়েছে, ই-গেট পার হলেই যাত্রীর ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হচ্ছে না। ই-গেট পার হওয়ার পর যাত্রীকে আগের মতোই ইমিগ্রেশন ডেস্কে গিয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের মুখোমুখি হতে হবে।
শাহজালাল বিমানবন্দরে আগের মতোই থাকবে ইমিগ্রেশন : ৬ জুন পরীক্ষামূলকভাবে কিছু যাত্রীকে ই-গেট দিয়ে সফলভাবে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে একজন যাত্রীর ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হতে মাত্র ১৫-২০ সেকেণ্ড সময় লেগেছে। তবু শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, যাত্রীদের আগের মতোই মোকাবিলা করতে হবে পুলিশের ইমিগ্রেশন ডেস্কে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণে একজন যাত্রীর পরিচয়পত্র তার পাসপোর্ট। পুরোনো পাসপোর্টের চাইতে বেশি সুরক্ষিত ই-পাসপোর্ট। এটি এমন এক ধরনের ইলেক্ট্রিক সিস্টেম যার কভারে একটি চিপ থাকে। যার মধ্যে থাকে পাসপোর্ট বহনকারীর তথ্য, সেই সাথে তথ্য জালিয়াতি থেকে সুরক্ষা ব্যবস্থা। পুরোনো এমআরপি পাসপোর্টের দশ আঙুলের ছাপ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলেও ই-পাসপোর্টে তা রয়েছে। এর মাইক্রোপ্রসেসরে একজন ব্যক্তির বায়োমেট্রিক ও বায়োগ্রাফিক ৪১টি তথ্য থাকে। এর মধ্যে ২৬টি তথ্য খালি চোখে দেখা যায়। ২টি বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে যা বিশেষ যন্ত্র ছাড়া পাঠ করা যায় না। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের ইমিগ্রেশন পদ্ধতি এখনও সম্পূর্ণরূপে স্বয়ংক্রিয় হয়নি। ই-গেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ভিসা ও পাসপোর্ট সংক্রান্ত নেটওয়ার্কের সংযোগ স্থাপনসহ অন্যান্য বিষয়গুলোও যুক্ত হয়নি। ফলে ই-গেটের পুরো সুবিধা চালু সম্ভব হয়নি। তবে আপাতত ই-গেটের আংশিক সুবিধা লাভ করতে পারবেন ই-পাসপোর্ট বহনকারীরা।
ই-গেটের মূল দুটি অংশের মধ্যে একটি অংশের কাজ পাসপোর্ট আসল নাকি জাল তা সনাক্ত করা। অন্য অংশটি পাসপোর্টধারী ব্যক্তি নিজেই নিজের পাসপোর্ট বহন করছেন কিনা তা নিশ্চিত করবে। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) মো. শাহরিয়ার আলম জানান, ‘ই-গেটের প্রথম অংশ যাত্রীর পাসপোর্ট স্ক্যান করবে। পাসপোর্টটি জাল না হলে প্রথম ফ্ল্যাপ ব্যারিয়ার খুলে যাবে। পরের গেটে থাকা ক্যামেরা যাত্রীর মুখ ও চোখ স্ক্যান করবে। পাসপোর্টের সঙ্গে যাত্রীর স্ক্যান করা ছবি মিলে গেলে পরের ফ্ল্যাপ ব্যারিয়ার খুলবে। কেউ অন্যের পাসপোর্ট নিয়ে এলে বা কারও বিরুদ্ধে আদালত বা সরকারের বিদেশযাত্রা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ব্যারিয়ার খুলবে না। ই-গেট এখন ইমিগ্রেশন পুলিশকে যাত্রী সনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। পুরো ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হলে যাত্রীর ভিসাসহ অন্য তথ্যও যাচাই করতে হয়। সেগুলো যাচাই করতে ইমিগেশন ডেস্কে আসতে হবে যাত্রীকে।’ দেশ থেকে বিদেশ ভ্রমণ এবং ফেরা দুই ক্ষেত্রেই ই-গেটের সুবিধা পাবেন যাত্রীরা।
ই-গেটের সুবিধা : আন্তর্জাতিক ভ্রমণে একজন যাত্রীর পরিচয়পত্র তার পাসপোর্ট। পুরোনো পাসপোর্টের চাইতে বেশি সুরক্ষিত ই-পাসপোর্ট। এটি এমন এক ধরনের ইলেক্ট্রিক সিস্টেম যার কভারে একটি চিপ থাকে। যার মধ্যে থাকে পাসপোর্ট বহনকারীর তথ্য, সেই সাথে তথ্য জালিয়াতি থেকে সুরক্ষা ব্যবস্থা। পুরোনো এমআরপি পাসপোর্টের দশ আঙুলের ছাপ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলেও ই-পাসপোর্টে তা রয়েছে। এর মাইক্রোপ্রসেসরে একজন ব্যক্তির বায়োমেট্রিক ও বায়োগ্রাফিক ৪১টি তথ্য থাকে। এর মধ্যে ২৬টি তথ্য খালি চোখে দেখা যায়। ২টি বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে যা বিশেষ যন্ত্র ছাড়া পাঠ করা যায় না। স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় একজন ব্যক্তির ই-পাসপোর্টের তথ্য পড়ার জন্য ই-গেট ব্যবহার করা হয়। এখানে মাইক্রোপ্রসেসরে থাকা বায়োমেট্রিক ও বায়োগ্রাফিক তথ্য যাচাই করে পাসপোর্টধারীকে শনাক্ত করা হয়। যেহেতু ই-গেটে পাসপোর্টের সাথে সাথে ব্যক্তির ভিসাও যাচাই করা হয় তাই ই-গেট সুবিধায় একজন পাসপোর্ট বনকনকারী নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারেন। এতে সাধারণ ইমিগ্রেশনে যতো সময় লাগে তার থেকে অনেক কম সময়ে ইমিগ্রেশন শেষ করা যায়। তবে এ সুবিধার জন্য আগে ইমিগ্রেশন পদ্ধতিকে অটোমেশনে আনতে হবে। আবার ই-গেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ভিসা ও পাসপোর্ট সংক্রান্ত নেটওয়ার্কের সংযোগও থাকতে হবে।
ই-গেট সব যাত্রীই ব্যবহার করতে পারবেন না : সকল ই-পাসপোর্ট বহনকারী যাত্রী ই-গেট ব্যবহার করতে পারবেন না। এ ব্যাপারে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ একটি পরিপত্র জারি করা হয়। ওই পরিপত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশি ই-পাসপোর্টধারী কূটনীতিক, অফিসিয়াল ই-পাসপোর্টধারী সরকারি কর্মকর্তা, বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা (সিআইপি), সেরা করদাতা কার্ডপ্রাপ্ত ই-পাসপোর্টধারী ব্যক্তি, ই-পাসপোর্টধারী পাইলট ও ক্রুরা ই-গেট ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়াও বাংলাদেশি ছাড়া অন্য কোনও দেশের যাত্রী বাংলাদেশে ই-গেট ব্যবহার করতে পারবেন না। এছাড়া, ইমিগ্রেশন পুলিশও চাইলে নির্ধারণ করতে পারবেন কোন যাত্রী ই-গেট ব্যবহার করবেন, কে করবেন না।
পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘কেউ যাতে জাল ভিসা, ডকুমেন্ট দিয়ে দেশ ত্যাগ করতে না পারে সেজন্য সর্তক থাকতে হয়। যেসব দেশে যেতে ভিসা লাগে না, কিংবা ভিসা পাওয়া সহজ সেসব দেশের ক্ষেত্রে আমরা একেবারে ওপেন রাখতে পারবো না। তাহলে মানবপাচার বেড়ে যাবে। এজন্য ইমিগ্রেশনে প্রবেশের আগেই গন্তব্য দেখে ঠিক করবো কোন যাত্রীরা ই-গেট ব্যবহার করে যাবেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *