সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজারে ভূমিবিরোধের জেরে হামলা-ভাংচুর-লুটপাটে প্রায় ৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হবার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারী মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আমতৈল ইউনিয়নস্থিত মাসকান্দি গ্রামে সংঘটিত এ ঘটনায় আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার বিবরণ ও ভূক্তভোগী সূত্রে প্রকাশ- জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে মাসকান্দি গ্রামের দুলাল মিয়া গংরা একই বাড়ীর বাসিন্দা আপন চাচাতো ভাই শামিম মিয়া গংদেরকে বাড়ী থেকে উচ্ছেদের পরিকল্পনায় ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নানাভাবে হয়রানী করে আসছিলেন। একপর্যায়ে দুলাল মিয়া গংদের সাথে শামিম মিয়ার কথা কাটাকাটির জেরে চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারী বিকেল ৫টার দিকে দুলাল মিয়া, রুকন মিয়া, নামর মিয়া, আলেদা বেগম, রেশমা বেগম, পারভীন বেগম, রুমা বেগম ও রুমি বেগম দলবদ্ধভাবে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় শামিম মিয়া গংদের উঠানে এসে শামিম মিয়াকে অকথ্য ভাষায় গালাগালাজ করতে থাকেন। এসময় শামিম মিয়ার স্ত্রী আফিয়া বেগম প্রতিবাদ করায় দুলাল মিয়া গংরা তাকে আক্রমন করলে তিনি আত্নরক্ষার্থে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন।
তখন দুলাল মিয়া কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে পড়েন। এসময় তার অন্যান্য সহযোগীরাও ঘরে ঢুকে সম্মিলিতভাবে ওয়ারড্রোব, ফ্রীজ, টিভি, শোকেস, গ্যাসের চুলা ইত্যাদি আসবাবপত্র নির্বিচার ভাংচুর করেন এবং ওয়াড্রোবের ভিতরের নিচের বক্সে একটি কৌটায় রক্ষিত ব্র্যাক থেকে উত্তোলিত ঋণের ৮০ হাজার টাকা, ওয়াড্রোবের ভিতরে একটি ব্যাগে রক্ষিত ৪১ হাজার টাকা, একটি প্লাস্টিকের ব্যাংকে জমাকৃত ৩০ হাজার টাকা, একটি মাটির ব্যাংকে জমাকৃত স্থানীয় মসজিদের উন্নয়নকাজের ৪ হাজার টাকা, শোকেসের ড্রয়ারে রক্ষিত ১ ভরি ওজনের স্বর্নের চেইন ও আধা ভরি ওজনের স্বর্নের ২টি চুড়ি, শামিম মিয়া ও তার স্ত্রী আফিয়া বেগমের এনআইডি কার্ড ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজজাত, তাদের সন্তানদের বইপত্র, একটি ডিনার সেট ও ১৬টি শাড়ি লুটপাট করেন। হামলা-ভাংচুর-লুটপাট শেষে, ‘এ ঘটনার ব্যাপারে কোন মামলা মোকদ্দমা করলে, প্রাণে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবেন’ বলে হুমকী দিয়ে সবাই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় শামিম মিয়ার প্রায় ৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি সংঘটিত হয়।
ঘটনার ব্যাপারে দুলাল মিয়া গংদের প্রধান দুলাল মিয়ার বক্তব্য জানার জন্য সরেজমিন ঘটনাস্থল ঘেষা দুলাল মিয়ার বসতগৃহে গেলে তিনি বলেন- শামিম মিয়া গংদের বর্ণিত ঘটনাটি সাজানো। প্রকৃতপক্ষে আমরাই তাদের হামলা-নির্যাতন ও ক্ষয়ক্ষতির শিকার। প্রাণভয়ে আতংকিত হয়ে আমি থানায় মামলা (জিআর ৪৩/২০২২ সদর) দায়ের করলে, তারা বেশ কিছুদিন হাজতবাস করে জামিনে ছাড়া পেয়েছে। সরেজমিন ঘটনাস্থল ঘেষা শামিম মিয়ার বসতগৃহে গেলে, পুরো বসতগৃহের তছনছ অবস্থা দৃশ্যমান হয়। এতেকরে, হামলা-ভাংচুর-লুটপাট ও ক্ষয়ক্ষতির মোটামোটি সত্যতা প্রতীয়মান হয়। শামিম মিয়া ও তার স্ত্রী আফিয়া বেগম বলেন- আমরা হতদরিদ্র থাকায়, অর্থ-বিত্ত, সহায়-সম্পদে স্বচ্ছল ও প্রভাবশালী দুলাল মিয়ার কাছে আমরা অসহায়।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে- দুলাল মিয়া ও শামিম মিয়া পরষ্পর আপন চাচাতো ভাই। দুলাল মিয়া বড়চাচা (মৃতঃ) এর ছেলে এবং শামিম মিয়া ছোটচাচা (জীবিত) এর ছেলে। দুলাল মিয়া অর্থ-বিত্ত, সহায়-সম্পদে স্বচ্ছল ও প্রভাবশালী এবং শামিম মিয়া অর্থ-বিত্ত, সহায়-সম্পদে প্রায় হতদরিদ্র ও প্রভাবহীন। মূলতঃ বাড়ীতে শামিম মিয়া গংদের অংশ দুলাল মিয়ার কাছে বিক্রি করতে রাজী না হবার কারণেই তাদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি। তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়ে উভয়পক্ষই কমবেশী মারধোর ও ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন। ঘটনার পর উভয়পক্ষই থানায় অভিযোগ করেছেন। শামিম মিয়ার অভিযোগ এফআইআর হয়নি। দুলাল মিয়ার অভিযোগ এফআইআর হয়েছে। শুনেছি স্থানীয়ভাবে আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করা হলেও, দুলাল মিয়ার নারাজীর কারণে তা ব্যর্থ হয়।
সর্বশেষ- এ ঘটনায় শামিম মিয়ার স্ত্রী আফিয়া বেগম বাদী হয়ে গত ২১ এপ্রিল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (দ্রুত বিচার) আদালতে ‘আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) আইন ২০১৪ এর ৪ ও ৫ ধারায়’ একটি মামলা (সিআর ০৩/২০২২) দায়ের করেছেন।