ইশরাত জাহান চৌঃ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উপজেলা পরিষদ উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন৷ আজ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত হলফনামায় দেখা যায়, আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী প্রেমসাগর হাজরা প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থীর মধ্যে শিক্ষায় এগিয়ে আছেন। তার নির্বাচনী প্রতীক আনারস। ঘোড়া প্রতীক নিয়ে আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি আফজল হক এগিয়ে আছেন সম্পদে।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ভানু লাল রায়ের নগদ অর্থ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চেয়ে বেশী৷ জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মিজানুর রব একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন৷ হলফনামায় প্রার্থীদের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে,আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী ও শ্রমিক লীগ নেতা প্রার্থী প্রেমসাগর হাজরার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাশ, আফজল হক এসএসসি, ভানুলাল রায় অষ্টম শ্রেণি এবং মিজানুর রব এসএসসি।
স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির কলামে দেয়া তথ্যে সবেচেয়ে বিত্তশালী প্রার্থী আফজল হক তার হলফ নামায় পেশা হিসেবে ব্যবসা উল্লেখ করেছেন এবং তার মোট সম্পদের পরিমান দেখিয়েছেন ১০ কোটি ৮৫ লক্ষ ৪ হাজার ৭টাকা৷ আফজল হকের বাৎসরিক আয় তিন লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা,তার কাছে নগদ ১০ লক্ষ টাকা এবং তার স্ত্রীর কাছে নগদ ১৫ লক্ষ টাকা রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি৷ ব্যাংকে তার হিসাবে ১ লক্ষ ৭৯ হাজার সাতাশি টাকা রয়েছে৷ স্বর্ণ আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী আফজলের আছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার৷
কৃষি ও অকৃষি জমি মিলিয়ে আফজল ও তার স্ত্রীর রয়েছে মোট ১১.৩১ একর জায়গা,যার মধ্যে একটি দালান ও একটি বাগান রয়েছে৷ আফজল হকের ব্যাংকে ঋণ আছে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা৷
আরেক প্রার্থী প্রেমসাগর পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন কৃষিকাজ,তার হাতে নগদ আছে ২ লক্ষ টাকা। তার ব্যাংকে নিজের নামে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার এবং স্ত্রীর নামে আছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা৷ কৃষিকাজ থেকে তার বাৎসরিক আয় ৫০ হাজার টাকা,শেয়ার সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকে তার উপর নির্ভরশীলদের রয়েছে আরো ৫ লক্ষ টাকা৷ যানবাহনের কলামে প্রেমসাগর লিখেছেন তার উপর নির্ভরশীলদের একটি কার ও মটরসাইকেল রয়েছে৷ প্রেমসাগরের স্ত্রীর ৩ লক্ষ টাকার স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে পাশাপাশি ইলেকট্রনিক্স পন্য ও আসবাবপত্র রয়েছে আড়াই লাখ টাকার৷ প্রেমসাগরের নামে দুইটি ফৌজদারী মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি৷
অপরদিকে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ভানু লাল রায়ের উপজেলার পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকায় হাওর বিলাস ফিশারী নামে একটি মৎস্য খামার রয়েছে ৷ ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। পাশাপাশি তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন বাৎসরিক ১ লক্ষ ১১ হাজার টাকা সন্মানি পেতেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন৷ ভানু লাল রায়ের কাছে নগদ অর্থ আছে ১৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা,যানবাহন আছে তার ৫৫ হাজার টাকার৷ বানু লাল রায়ের স্থাবর সম্পত্তি আছে ৪.৯ একর যার বর্তমান মূল্য ৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা,ইলেকট্রনিক্স ও আসবাবপত্র রয়েছে ৯০ হাজার টাকার৷ ভানু লাল রায়ের মোট সম্পত্তির পরিমান ২৭ লক্ষ ৫৪ হাজার ৬৩০ টাকা৷
জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মিজানুর রব এক্সপেট্রা লিমিটেড নামের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন বলে হলফনামায় জানিয়েছেন৷ মিজানুর রবের চাকুরি থেকে বাৎসরিক আয় ৩ লক্ষ টাকা,তার কাছে নগদ অর্থ আছে ৪ লক্ষ টাকা এবং ব্যাংকে জমা আছে ১ লক্ষ টাকা৷ মিজানুর রবের ১ লক্ষ টাকা মূল্যমানের ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে,তার আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী আছে ১ লক্ষ টাকার৷ তার কোন কৃষি বা অকৃষি জমি নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি৷ মিজানুর রবের মোট সম্পদের পরিমান ৭ লক্ষ টাকা৷ সুজন’র (সুশাসনের জন্য নাগরিক) শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাওসার ইকবাল বলেন, হলফনামার জনসমক্ষে প্রকাশ খুবই ভালো উদ্যোগ, এই হলফনামা প্রকাশের ফলে ভোটররা প্রার্থীদের সমন্ধে বিস্তারিত জানার সুযোগ পায়৷ হলফনামায় প্রার্থীরা তাদের আর্থিক বিষয়সহ ব্যক্তিগত যেসব তথ্যাদি উপস্থাপন করেছেন তা যাচাই বাছাই হওয়া উচিত৷