ইশরাত জাহান চৌঃ
বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে অতি স্বল্পসময়ে সুপারহিট খ্যাতি লাভ করেন ক্ষণজন্মা নায়ক সালমান শাহ। নাটক দিয়ে তার অভিনয় জীবন শুরু হলেও ১৯৯০-এর দশকে তিনি চলচ্চিত্রে অন্যতম জননন্দিত শিল্পী হয়ে উঠেন। আজও লক্ষ লক্ষ ভক্তদের হৃদয়ে বেঁচে আছেন প্রিয় সালমান। তার অভিনয় ও বাচনভঙ্গি তরুণ-তরুণীদের মন জয় করে নেয়। নায়ক সালমান ও ব্যক্তি সালমান দুইটিই জনপ্রিয়তার শীর্ষ স্পর্শ করে। নব্বইয়ের দশকে একজন নায়কের একসাথে এত সংখ্যক হিট হওয়া সিনেমার তালিকায় সালমান শাহ অভিনীত ছবিই শীর্ষে । আজও দর্শকদের কাছে ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রাণ নায়ক সালমান।
আজ তার ২৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী।
নায়ক সালমান শাহ’র প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন।। তার পিতা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। তিনি পরিবারের বড় ছেলে। তার জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট শহরে দাড়িয়া পাড়াস্থ তার নানা বাড়ি আব এ হায়াত ভবনে।
নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে দাপটের সাথে ক্যারিয়ার জীবনে শুরু করেন নায়ক সালমান শাহ । ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা দিয়ে তার অভিষেক হয়। একই ছবিতে অভিষেক ঘটে নায়িকা মৌসুমী ও গায়ক আগুনের। সালমান শাহ ক্যারিয়ারের শুরুতে কাজ করেছেন ছোট পর্দায়। ‘আকাশ ছোঁয়া’, ‘দোয়েল’, ‘সব পাখি ঘরে ফেরে’, ‘সৈকতে সারস’, ‘নয়ন’ ও ‘স্বপ্নের পৃথিবী’তে নাটকে তাকে অভিনয় করতে দেখা গেছে। এছাড়া প্রচুর বিজ্ঞাপনও করেছেন তিনি।
তিন বছরে সর্বমোট ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি এবং সবকয়টিই ছিল ব্যবসাসফল। সালমান শাহ অভিনীত সিনেমাগুলো হলো- কেয়ামত থেকে কেয়ামত (বিপরীতে মৌসুমী), তুমি আমার (শাবনূর), অন্তরে অন্তরে (মৌসুমী), কন্যাদান (লিমা), জীবন সংসার (শাবনূর), চাওয়া থেকে পাওয়া (শাবনূর), সুজন সখী (শাবনূর), বুকের ভেতর আগুন (শাবনূর), এই ঘর এই সংসার (বৃষ্টি), স্নেহ (মৌসুমী), বিচার হবে (শাবনূর), প্রেমযুদ্ধ (লিমা), মহা মিলন (শাবনূর), তোমাকে চাই (শাবনূর), বিক্ষোভ (শাবনূর), আশা ভালোবাসা (শাবনাজ), মায়ের অধিকার (শাবনাজ), আঞ্জুমান (শাবনাজ), আনন্দ অশ্রু (শাবনূর), প্রেম পিয়াসী (শাবনূর), সত্যের মৃত্যু নেই (শাহনাজ), প্রিয়জন (শিল্পী), শুধু তুমি (শ্যামা), স্বপ্নের পৃথিবী (শাবনূর), স্বপ্নের নায়ক (শাবনূর), দেন মোহর (শাবনূর) ও স্বপ্নের ঠিকানা (শাবনূর)।
যদিও তার জন্মনাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন, কিন্তু চলচ্চিত্র জীবনে তিনি সবার কাছে সালমান শাহ বলেই পরিচিত ছিলেন। সালমান পড়াশুনা করেন খুলনার বয়রা মডেল হাইস্কুলে। একই স্কুলে চিত্রনায়িকা মৌসুমী তার সহপাঠী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি ঢাকার ধানমন্ডি আরব মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন , আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ধানমন্ডির মালেকা সায়েন্স কলেজ (বর্তমান ডক্টর মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ) থেকে বি.কম. পাস করেন।
২৫ বছরেও বাংলাদেশের এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলার নিষ্পত্তি হয়নি৷ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নিজ ঘরে সালমান শাহ’কে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশের একাধিক রিপোর্টে বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলা হলেও ছেলের মৃত্যুর সঠিক তথ্য জানতে আরো তদন্ত চান তার মা নীলা চৌধুরী ।