সিলেটের হরিপুরে ৪ স্তরে গ্যাসের সন্ধান লাভ

সিলেটের হরিপুরে ৪ স্তরে গ্যাসের সন্ধান লাভ

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: সিলেটের হরিপুর গ্যাস ক্ষেত্রের ৪টি স্তরে গ্যাসের অবস্থান চিহ্নিত করেছে বাপেক্স। এর মধ্যে সবচেয়ে নিচের স্তর ১ হাজার ৯৯৮ মিটার গভীর থেকে গ্যাস ওঠতে শুরু করেছে। গত ১০ জানুয়ারী সোমবার বিকেল ৪টার দিকে কূপটির ফ্লেয়ার লাইনে ওঠে আসা গ্যাসে আগুনের শিখা জ্বালিয়ে গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হয়।
বাপেক্স ও পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে কূপটির ২ হাজার ৭২ থেকে ২ হাজার ৯৪ মিটার গভীরতায় তেল আছে বলে ধারণা করা হয়েছিলো। কিন্তু, খননকালে ওই স্তরে পৌঁছাতে পারেনি বাপেক্সের রিগ (খননযন্ত্র)। ২ হাজার ২৫ মিটারে রিগটি আটকে যায়। ফলে, সম্ভাব্য তেলের স্তরটি বাদ দিয়ে এর ওপরে চিহ্নিত ৪ স্তর থেকে গ্যাস উত্তোলনের প্রক্রিয়া হিসেবে ডিএসটি (ড্রিল স্টেম টেস্ট) করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
হরিপুর গ্যাস ক্ষেত্রটি পরিচালনা করে পেট্রোবাংলার অধীনস্থ কোম্পানি সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)। এসজিএফএলের সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তিতাসের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো. নূরুল্লাহর তত্ত্ববাবধানে কূপটির খননকাজ শুরু হয়।
তিনি বলেন, কূপটির যে স্তর থেকে ওঠে আসা গ্যাসে শিখা জ্বালানো হয়েছে, এর উপরের আরো ৩টি স্তরের অন্তত একটি অনেক সমৃদ্ধ। সবগুলো স্তরে ডিএসটি করার পর সেখানকার সম্ভাব্য মজুত নির্ধারণ এবং বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলন শুরু করা হবে।
এসজিএফএল সূত্র জানায়- ভূকম্পন জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে এ কূপে তেল পাবার আশা করা হয়েছিল। কূপটি খনন করার কথা ছিলো ২ হাজার ১০০ মিটার গভীর। কিন্তু, ২ হাজার ২৫ মিটার পর্যন্ত খনন করার পর ড্রিলিং পাইপ আটকে যায়- যা প্রচলিত কোনো পদ্ধতিতেই ছাড়ানো যায়নি। ভূ-তাত্ত্বিক জটিলতা এবং খননকাজ পরিচালনায় ক্রুটির কারণে এটা হয়ে থাকতে পারে।
সূত্র জানায়, এ অবস্থায় করণীয় নির্ধারণের জন্য গত ১৭ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞসহ সব পক্ষ এক সভায় মিলিত হন। সে সভায় সামগ্রিক বিষয় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, ড্রিলিং পাইপ যেখানে আটকে গেছে, সেখানেই এটি কেটে সিমেন্টিং করে দেয়া হবে। অর্থাৎ কূপটির খননকাজ সেখানেই শেষ করা হবে। এরপর ২ হাজার ২৫ মিটারের মধ্যে চিহ্নিত ৪টি স্তরে ডিএসটি সম্পন্ন করে গ্যাস উত্তোলন করা হবে।
হরিপুর ১৯৫৫ সালে আবিষ্কৃত এ দেশের প্রথম গ্যাস ক্ষেত্র। ১৯৬০ সালে ক্ষেত্রটির ১ নম্বর কূপ থেকে দৈনিক ৪০ লাখ ঘনফুট করে গ্যাস ছাতক সিমেন্ট কারখানায় সরবরাহ শুরু হয়। বাংলাদেশে শিল্পে গ্যাস ব্যবহারও সেই প্রথম। সে ছিলো এক নতুন যুগের সূচনা। এরপর ১৯৬১ সালে এই ক্ষেত্রের আরেকটি কূপ থেকে ৩০ মাইল দীর্ঘ ও ৮ ফুট ব্যাসের পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয় ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত হরিপুর গ্যাস ক্ষেত্রে ৬টি কূপ খনন করা হয়। তবে, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সময় এর ২টি কূপ চালু ছিলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *