সুরমার ঢেউ সংবাদ :: বছরের পর বছর ঘর না থাকার কষ্টের জীবন শেষ হতে যাচ্ছে ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঘোষিত মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে আধা পাকা ঘর এবং জমি পাচ্ছেন এসব মানুষ। এটিই বিশ্বে গৃহহীন মানুষকে বিনামূল্যে ঘর করে দেয়ার সবচেয়ে বড় কর্মসূচি। এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টরা জানান, গৃহহীন-ভূমিহীনদের ঘর করে দেয়ার এত বড় কর্মসূচি পৃথিবীতে আর একটিও নেই।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা উপকারভোগীদের ঘর বুঝিয়ে দেবেন। মুজিব বর্ষের মধ্যে সবার জন্য ঘর নিশ্চিত করতে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৯ লাখ পরিবারকে ঘর করে দেবে শেখ হাসিনার সরকার। দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন অসহায় মানুষদের মধ্যে যাদের ভূমি নেই তাদের সরকারের খাস জমি থেকে ২ শতাংশ ভিটে এবং ঘর দিচ্ছে সরকার। যাদের ভিটে আছে ঘর নাই তাদের ঘর দিচ্ছে সরকার।
প্রতিটি ঘর ২ কক্ষবিশিষ্ট। এতে ২টি রুম ছাড়াও সামনে একটি বারান্দা, ১টি টয়লেট, ১টি রান্নাঘর ও ১টি খোলা জায়গা থাকবে। পুরো ঘরটি নির্মাণের জন্য খরচ হবে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা এবং মালামাল পরিবহনের জন্য প্রতি পরিবারকে দেয়া হবে ৪ হাজার টাকা। যারা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছেন তাদের চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন তারা। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মুজিব বর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না- সরকারের এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২৩ জানুয়ারী ১ম পর্যায়ে সারাদেশে ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর দিচ্ছে সরকার।
২৩ জানুয়ারী ৬৬ হাজার ১শ ৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাস জমির মালিকানা দিয়ে বিনা পয়সায় ২ কক্ষবিশিষ্ট ঘর মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রদান করেছেন। একইসঙ্গে ব্যারাকের মাধ্যমে ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭শ ১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হবে বলে জানান মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, একসঙ্গে বিনে পয়সায় এত ঘর করে দেয়া, সারা দুনিয়াতে প্রথম এবং একমাত্র ঘটনা । মাদার অব হিউম্যানিটি সারা দুনিয়াতে একটি নজির স্থাপন করলেন।
২৩ জানুয়ারি প্রায় ৬৯ হাজার পরিবারকে ঘর দেয়ার পর থেকে পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে আরও ১ লাখ ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সারা বাংলাদেশে ঘরও নাই, জমিও নাই এমন পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩শ ৬১। ভিটেমাটি আছে, ঘর জরাজীর্ণ কিংবা ঘর নাই এমন পরিবারের সংখ্যা ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সারা বাংলাদেশে যে তালিকা করা হয়েছে সব মিলিয়ে সেই তালিকায় ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬শ ২২টি পরিবার রয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের নথি থেকে জানা যায়- ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে আশ্রয়ণ নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস অবধি ৩ লাখ ২০ হাজার ৫২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো- ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, ঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা এবং আয় বাড়ে এমন কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণ। সূত্র: বাংলানিউজ