সুরমার ঢেউ সংবাদ :: আধুনিকতার ছোয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প। বাজারে প্লাস্টিকের আসবাবপত্রের কদর বাড়ায় ও প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাবে এ শিল্পের কারিগরদের মাঝে নেমে এসেছে দুর্দিন। সরকারী পৃষ্টপোষকতার অভাব, কাঁচামাল সংকট, প্রশিক্ষণ ও বাজার সৃষ্টি না হওয়ায় এ শিল্প হারিয়ে যাবার উপক্রম বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সরকারী হিসেবে বাঁশ ও বেত শিল্পীদের কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও মাঠ পর্যায়ের হিসেব অনুযায়ী জানা গেছে, জেলার ৩টি উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামের ২ হাজার পরিবার এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছেন।
জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার পৃথ্বিমপাশা ও কর্মধা, কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ও ইসলামপুর এবং রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার, উত্তরভাগ ও টেংরা ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামের লোকজন এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছেন। জীবন জীবিকার তাগিদে এবং ঐতিহ্য রক্ষায় এ পেশা ধরে রাখলেও বর্তমানে বাঁশের অভাব ও মূল্য বৃদ্ধি এবং আর্থিক সংকটের কারণে এ পেশাটি হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘর গৃহস্থালি ও কৃষি কাজে ব্যবহৃত কুলা, ডালা, টুকরি, ঝাকা, চাটাই, ছাতা, মই ও কাটিয়া, মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত ডরি, পারন, সেচুতিসহ নানাবিধ পণ্য তৈরি করা হয় বাঁশ ও বেত দিয়ে। এছাড়াও সৌন্দর্যবর্ধন ও নিত্য প্রয়োজনীয় নানা আসবাবপত্র এসব উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়।
জেলার ব্রাহ্মণবাজার, রবিরবাজার, মুন্সিবাজার, টেংরাবাজার, আদমপুরবাজারে দেখা গেছে, স্থানীয় শিল্পীরা ও ব্যবসায়ীরা বাঁশ ও বেতের পণ্য নিয়মিত বিক্রি করে আসছেন। জেলার কুলাউড়া উপজেলার নন্দীরগ্রাম, দোয়াল গ্রাম, বুধপাশাসহ কয়েকটি গ্রাম ও রাজনগর উপজেলার করিমপুর, দাশটিলা, মজিদপুর, উত্তরভাগ, দক্ষিণ টেংরা, কমলগঞ্জ উপজেলার আদকানি, গুলেরহাওর, কোনাগাঁও, মধ্যভাগ, কানাইদাশী, কাউয়ারগলা, জলালপুর, কাঠালকান্দিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে বাঁশ ও বেত শিল্প এখনো জীবিত রয়েছে। তাদের দাবি সরকারী উদ্যোগে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ও বাজারজাত সুবিধা প্রদান করলে নানা প্রতিকূলতা থেকে এ শিল্পকে রক্ষা করা সম্ভব। বাঁশ ও বেত শিল্পীরা এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে রাখলেও প্রয়োজনীয় মূলধন, সরকারী পৃষ্টপোষকতা, বাজারজাত করণসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। নানা প্রতিকূলতা ও শিল্পের উপকরণ বাঁশের অভাব রয়েছে। স্থানীয় ব্যাংকের শাখাসমূহ থেকে তারা ঋণ সুবিধা পাননা বলে জানান। কথা হয় রাজনগর উপজেলার করিমপুরের বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগর গোপাল বিশ্বাস, গীতা সরকার, রূপালী সরকার, বাবলী সরকারসহ আরো অনেকের সাথে। তারা বলেন, ‘বাঁশের উচ্চ মূল্য ও আর্থিক সংকটের কারণে লাভের মুখ দেখতে পারেননা। পরিবার পরিজনের ভরণ পোষণ এবং ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতেও হিমশিম খেতে হয়। এখন মনে হয় এ শিল্পের কাজ না শিখলেই ভালো হতো। এলাকাবাসীর দাবী বাঁশ ও বেত উৎপাদিত এলাকা হিসাবে এখানে সরকারী সহায়তায় বাঁশ ও বেত শিল্পের উন্নয়ন ঘটলে বেকারত্ব দূরীকরণ থেকে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে শিল্পটি। সরকারী পৃষ্টপোষকতা পেলে বাঁশ ও বেত শিল্পের বৈপ্লবিক পরিবর্তন সম্ভব হতো। এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, বাঁশ ও বেত শিল্পের সাথে কত কারিগর জড়িত আছে এর সঠিক তালিকা সংগ্রহ হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জন্য সার্বিক সহযোগিতা রয়েছে।