সুরমার ঢেউ সংবাদ :: চার লেনে উন্নীত হবার পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ব্যবহারে টোল দিতে হবে। অন্য মহাসড়কের তুলনায় এটি নির্মাণে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। এ মহাসড়কে উন্নত বিশ্রামাগার, ওয়াশরুমসহ চালক-যাত্রীদের বিভিন্ন সুবিধাও নিশ্চিত করা হবে। ৫ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে ও দুইপাশে সার্ভিস লেনও থাকবে। ১৬ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার একনেকে ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পটি অনুমোদনের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এসব কথা জানান। একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন। সভার পর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন পরিকল্পনামন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে ব্যয় বেড়ে যাবার কারণ ব্যাখ্যা করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন- সভায় ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ মহাসড়ক নির্মাণ শেষ হলে টোল আদায় করতে হবে। তিনি বলেনে, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিনা পয়সায় সেবা পাওয়ার দিন শেষ। আমরা সেবা পেতে চাই, কিন্তু পয়সা দিতে রাজি না। এটা আমাদের কালচার। এ কালচার থেকে আমাদেরকে বের হয়ে আসতে হবে। দেশের সব বড় বড় সড়কে টোল আদায়ের ব্যবস্থা করতেও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওই অর্থ একটা ইয়ার মার্ক অ্যাকাউন্ট করে জমা রাখতে হবে। যেন ওই সড়কগুলো মেরামত করতে হলে ওই অ্যাকাউন্টের অর্থ দিয়ে করা যায়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে এডিবির অর্থায়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। ১৬ হাজার ৯শ ১৮ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন হচ্ছে এ মেগা প্রকল্প। এ টাকার মধ্যে সরকারের অংশ ৩ হাজার ৬শ ৭৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আর, বাকি ১৩ হাজার ২শ ৪৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা দেবে এডিবি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- দেশে চার লেনে উন্নীত হওয়া মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয়ের কয়েকগুণ বেশি খরচ হচ্ছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে। প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে ৮০ কোটি টাকার বেশি। অথচ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় হয় ২১ কোটি টাকা। ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় ২১ কোটি টাকা। হাটিকুমরুল থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেন সড়কে ব্যয় হয় ৫৫ কোটি টাকা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন- “বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যা ব্যয় হবার তাই হবে। কস্ট কম্প্রোমাইজ করে কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করা যাবেনা। তিনি বলেন, ‘এটা একটা হিউজ প্রজেক্ট। এ প্রকল্পে ৫ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে আছে। এ কস্টও তো আমাকে ধরতে হবে। এছাড়া, দুই পাশে সার্ভিস লেন রয়েছে। এ মহাসড়কে যাত্রী ও গাড়িচালকদের নানা সুবিধাও নিশ্চিত করা হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ মহাসড়কে যাতায়াতের পথে যেন বিশ্রামের জায়গা থাকে, কফি পানের জায়গা থাকে। একটু বসে হাল্কা হবার জায়গা থাকে। একটা সুন্দর ওয়াশরুম যেন থাকে। নারীদের চেঞ্জিং রুম ও বসার জায়গা যেন থাকে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ অন্যান্য মহাসড়কেও এসব ব্যবস্থা রাখতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারীতে শুরু করে আগামী ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ভারত, চীন, মিয়ানমার, ভুটান ও নেপালসহ ৬ দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য এ টেকসই সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। বৈঠকে ১৯ হাজার ৮শ ৪৪ কোটি ৫৭ টাকা ব্যয়ের মোট ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। এরমধ্যে ৬ হাজার ৫শ ৯৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে। বাকি ১৩ হাজার ২শ ৪৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা থেকে আসবে।