মৌলভীবাজারে পরিবার পরিকল্পনা সেবাবঞ্চিত ৩ লাখ সক্ষম দম্পতি

মৌলভীবাজারে পরিবার পরিকল্পনা সেবাবঞ্চিত ৩ লাখ সক্ষম দম্পতি

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজারে পরিবার পরিকল্পনা সেবাবঞ্চিত ৩ লাখ সক্ষম দম্পতি। পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা গ্রাম-গঞ্জের সক্ষম দম্পতিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবার পরিকল্পনা সেবা দেয়ার কথা থাকলেও, করোনাভাইরাসের অজুহাতে প্রসূতি স্বাস্থ্য, বিশেষ করে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার ৩ লাখ দম্পতি। ফলে, ব্যাহত হতে শুরু করেছে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি। জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গর্ভবতী হয়েছেন ২৬ হাজার ১২৫ জন নারী। গর্ভকালীন মৃত্যু হয়েছে ৪০ জনের- যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন স্বাস্থ্য সহকারী (ইপিআই) বলেন, ‘তার একটি ওয়ার্ডে ৮টি ব্লক রয়েছে। প্রতিটি ব্লকে বার্ষিক ৩০-৩৫ জন নারী গর্ভবতী হবার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গর্ভবতী হয়েছেন ৮৫ জনের বেশী- যা বিগত বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। তিনি আরও বলেন, পরিবার কল্যাণ সহকারীদের দায়িত্বহীনতার কারণে এমনটি হয়েছে। জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পুরো জেলায় পরিবার কল্যাণ সহকারী রয়েছেন ২৩৮ জন, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক আছেন ৪৯ জন ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৪৩টি। জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ ৪৩টি পয়েন্টে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। কিন্তু, সেবা বা কেন্দ্রের বিষয়ে স্থানীয় মানুষের পর্যাপ্ত ধারণা না থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত মৌলভীবাজারের কয়েক লাখ দম্পতি। অন্যদিকে, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ বলছে জনবল সংকট, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের দায়িত্বহীনতা ও আন্তরিকতার অভাবে পর্যাপ্ত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র খোলা রাখার কথা থাকলেও সরেজমিন জেলা সদরের বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, সকাল ১০টা কিংবা ১১টার পরও অনেক কেন্দ্র খোলা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার অন্যান্য উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিত্র এমনই। জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের রাশেদা আক্তার রুমি বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিতে এসে সঠিক সেবা পাইনি। সেখানে দায়িত্বরত নিলুফার ইয়াসমিন রোগীদেরকে কোনো গুরুত্বই দেননা। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে যেতে বলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, বেশিরভাগ সময় নিলুফার ইয়াসমিন কেন্দ্রে থাকেননা। তাই রোগীদের আসাও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিলুফার ইয়াসমিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কিছু লোক আছে যারা অপরের ভালো চায়না। তারাই এ ধরনের অভিযোগ করে। আমি সাধ্য অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি। একই উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের বটনীঘাট, ভরাডহর ও পাতিলাসাঙ্গন ইউনিট পরিবার কল্যাণ সহকারীর দায়িত্বে রয়েছেন রোকেয়া বেগম। এসব ওয়ার্ডের দম্পতিরা তাকে চেনেনই না। এলাকার মহিলারা জানেননা যে পরিবার পরিকল্পনা সেবা নেয়ার জন্য সরকারের এরকম একটা বিভাগ রয়েছে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এ ইউনিটের একাধিক দম্পতি বলেন, আমাদের এলাকায় এরকম কেউ আসেননি। মাঝেমধ্যে একজন মহিলা এসে শিশুদের টিকা দেয়ার জন্য বলেন। এছাড়া আর কেউ আসেননা। এ বিষয়ে পরিবার কল্যাণ সহকারী রোকেয়া বেগম বলেন, আপনার সঙ্গে কথা বলার আমার সময় নেই। প্রয়োজনে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি করব। আপনার মতো আমারও একটা পত্রিকা রয়েছে। গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের লাঠিটিলা ও কচুরগুল এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যিনি ওই এলাকায় পরিবার কল্যাণ সহকারীর দায়িত্বে রয়েছেন তিনি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দেননা। রোগীরা বাধ্য হয়ে উল্টো তার বাড়িতে সেবা নিতে যান। অনেক সময় বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়না। এদিকে, একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, জেলার প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন করে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রয়েছেন। কিন্তু, করোনাকালীন পুরো সময় ওই কর্মকর্তাদের কক্ষ তালাবদ্ধ ছিল। জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের উপ-পরিচালক আবদুর রাজ্জাক সেবা ঘাটতির বিষয় স্বীকার করে বলেন, জনবল সংকটের কারণে পর্যাপ্ত সেবা দেয়া যাচ্ছেনা। তবে, অনেক পরিবার কল্যাণ সহকারী, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে অনেক অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। ইতোমধ্যে অনেককে শোকজও করেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *