জাফলংয়ে দেশের প্রথম ভূ-তাত্ত্বিক জাদুঘর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো

জাফলংয়ে দেশের প্রথম ভূ-তাত্ত্বিক জাদুঘর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: জাফলংয়ে দেশের প্রথম ভূ-তাত্ত্বিক জাদুঘর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো(বিএমডি)। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের স্থান সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং। ‘প্রকৃতি কন্যা’ জাফলং দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি সেখানে রয়েছে প্রাচীন পাথর-শিলালিপিসহ প্রাগৈতিহাসিক যুগের অনেক নিদর্শন। জাফলংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবাইকে টানলেও সবসময়ই আড়ালে থেকে গেছে এসব প্রাচীন নিদর্শন। উল্টো অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলনের ফলে ধ্বংসের পথে প্রাগৈতিহাসিক যুগের অনেক অমূল্য দলিল। তবে দেরিতে হলেও এসব নিদর্শন রক্ষায় জাফলংয়ে ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে এটিই হবে দেশের প্রথম ভূ-তাত্ত্বিক জাদুঘর।
বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সাল থেকেই জাফলংয়ের ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং সেখানে ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে জাফলংয়ের ২২ দশমিক ৫৯ একর ভূমিকে ‘ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য’ হিসেবে ঘোষণা করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। তবে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে যায় জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা। সম্প্রতি আবার এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (ভূ-তত্ত্ব) মো. নুরুদ্দিন সরকার বলেন, জাফলংয়ে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রথম পর্যায়ে আমরা ওই এলাকার ১০ একর জায়গা অধিগ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছি। ভূ-তাত্ত্বিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও জাদুঘর বাস্তবায়নে এর আগে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের পরই কমিটিগুলো আবার সক্রিয় হয়ে জাদুঘরের জন্য পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়নে কাজ শুরু করবে।
ভূমি অধিগ্রহণ প্রসঙ্গে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, ভূ-তাত্ত্বিক জাদুঘরের জন্য শিগগিরই নির্ধারিত ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করতে পারব আমরা। এটি করতে গিয়ে যদি আইনগত কোনো বিষয় আসে তা আইনসম্মত উপায়েই সমাধান করা হবে। গত সেপ্টেম্বরে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের কাছে ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর স্থাপনের বিষয়ে একটি চিঠি দেয় বিএমডি। এতে বলা হয়েছে, জাফলংয়ের উন্মুক্ত শিলাস্তর, চুনাপাথর সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য জাতীয় স্বার্থে ২৫ দশমিক ৫৯ একর ভূমিকে ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ঘোষণা করা হয়েছে। ওই ভূমিতে আন্তর্জাতিক মানের একটি ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর নির্মাণ করা হবে। গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন জানায়, ‘ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য’ ঘোষণার আগে ২০১২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাফলংকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণার নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত। এরপর ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাফলংকে ইসিএ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এদিকে, ‘মেসার্স জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গত ১৭ আগস্ট একটি চিঠি দিয়ে জাফলংয়ে ইসিএ ও ভূ-তাত্ত্বিক ঐতিহ্য ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকা ১৯৭২ সালে অধিগ্রহণ করার দাবি এবং সম্প্রতি উচ্চ আদালতের আদেশে পাথর তোলার প্রস্তুতি শুরু করে। এ প্রস্তুতির খবর পেয়ে জাফলংয়ে ভূ-তাত্ত্বিক জাদুঘর নির্মাণে তত্পরতা শুরু করে বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)। গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দেয়া বিএমডির মহাপরিচালক মো. জাফর উল্লাহ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, জাফলং ইসিএভুক্ত এলাকা ছাড়াও ভূ-তাত্ত্বিক ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় একটি ভূ-তাত্ত্বিক জাদুঘর স্থাপন করা হবে। মেসার্স জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনসহ আরো একটি প্রতিষ্ঠানকে ওই স্থানে পাথর উত্তোলন থেকে বিরত থাকতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুস সাকিব বলেন, বিএমডির মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত চিঠি আমরা পেয়েছি। বিএমডির কাজে সার্বিক সহায়তা করতে উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি রয়েছে।
বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মহ. শের আলী বলেন, জাফলংয়ের ভূ-তাত্ত্বিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়েই এখানে ভূ-তাত্ত্বিক জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং আমরা এ কাজ দ্রুত শেষ করতে চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *