সুরমার ঢেউ সংবাদ :: আবারও চেয়ারম্যানের পদ হারিয়েছেন হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার ১১নং গজনাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল। মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের আদেশে মহামান্য হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বাতিল ও মন্ত্রণালয়ের বরখাস্তের আদেশ বহাল হওয়ায় তিনি আবারও চেয়ারম্যানের পদ হারালেন।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাতের অভিযোগ প্রমানীত হওয়ায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে গত ৭ জুলাই নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুলকে ১১নং গজনাইপুর ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে বরখাস্ত করে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাতের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে বরখাস্ত ইমদাদুর রহমান মুকুলকে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতির পদ থেকেও সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
পরবর্তীতে ইমদাদুর রহমান মুকুল মহামান্য হাইকোর্টে রীট পিটিশন দায়ের করলে গত ২৩ আগস্ট শুনানী শেষে উক্ত বরখাস্তের আদেশ স্থগিত হয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে, মন্ত্রণালয়ের গত ১০ সেপ্টেম্বর জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্বপদে বহাল হয়ে জমকালো আনুষ্ঠানিকতা ও এলাকায় মিষ্টি বিতরণসহ আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেন ইমদাদুর রহমান মুকুল। সাময়িক বরখাস্ত হবার ৭৫ দিন পর স্বপদে বহাল হয়েই জমকালো আনুষ্ঠানিকতা ও এলাকায় মিষ্টি বিতরণসহ আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠা নিয়ে ইমদাদুর রহমান মুকুল ফের ব্যাপক সমালোচিত হন।
এদিকে, ৪ অক্টোবর মহামান্য হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রীমকোর্টে দায়েরী আপিল ৮ অক্টোবর শুনানি শেষে মহামান্য হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বাতিল ও মন্ত্রণালয়ের বরখাস্তের আদেশ বহাল হয়। মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগে মামলা পরিচালনা করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের নিয়োজিত আইনজীবী প্যানেলের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট শেখ শফিক মাহমুদ পুষ্প। এডভোকেট শেখ শফিক মাহমুদ পুষ্প বলেন- স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বরখাস্তকৃত ৫৩ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে ২৯ জন স্বপদে বহাল হন। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের ব্যর্থতায় প্রশ্নবিদ্ধ হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের নিয়োজিত আইনজীবী হিসেবে সরব হই। আপিল পিটিশন দায়ের করি মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগে। আপিল পিটিশনটি ৮ অক্টোবর শুনানি শেষে মহামান্য হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বাতিল ও মন্ত্রণালয়ের বরখাস্তের আদেশ বহাল হয়। আগামী ২৮ ডিসেম্বর এ মামলার পরবর্তী শুনানী অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য- নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলার ১১নং গজনাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল বিগত ৪ বছর ধরে ২২৯ জন লোকের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (১০ টাকা কেজির) চাল আত্মসাৎ করে আসছিলেন। এ সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হবার প্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ও উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়। তদন্তে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (১০ টাকা কেজির) চাল আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ইমদাদুর রহমান মুকুলকে সাময়িক বরখাস্ত করে। ইমদাদুর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা তদন্ত প্রকিবেদন প্রদান এবং সালিশের মাধ্যমে বিরোধ ও মামলা নিষ্পত্তি করে দেয়ার নামে জামানত হিসাবে আদায়কৃত অর্থ আত্নসাতের অভিযোগও রয়েছে।