গরীবের চাল আত্নসাতের দায়ে বরখাস্ত নবীগঞ্জের গজনাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুকুল হাইকোর্টের আদেশে স্বপদে বহাল

গরীবের চাল আত্নসাতের দায়ে বরখাস্ত নবীগঞ্জের গজনাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুকুল হাইকোর্টের আদেশে স্বপদে বহাল

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :: গরীবের চাল আত্মসাতের অভিযোগ প্রমানীত হয়ে বরখাস্তকৃত নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলের সাময়িক বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। গত ২৩ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি এম. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি এম. মাহমুদ হাসান তালুকদারের দ্বৈত বেঞ্চ এ সাময়িক বহিষ্কারাদেশ স্থগিতের আদেশ প্রদান করেন।
ইমদাদুর রহমান মুকুলের পক্ষে রিট পিটিশন মামলাটি পরিচালনা করেন সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু। এর প্রেক্ষিতে ১০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তিনি স্বপদে বহাল হন। ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ইমদাদুর রহমান মুকুলের আয়োজনে গজনাইপুর ইউপি কার্যালয়ে জমকালো আনুষ্ঠানিকতা ও মিষ্টি বিতরণের মধ্য দিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ারম্যান হিসেবে ফের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সাময়িক বরখাস্ত হবার পর হাইকোর্টে রীট পিটিশন মামলা করে স্বপদে বহাল উপলক্ষ্যে জমকালো আনুষ্ঠানিকতা ও মিষ্টি বিতরণের মতো নির্লজ্জ কর্মকা-ে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইনপুর ইউনিয়নে বিগত ৪ বছর ধরে ২২৯ জন লোকের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাল আত্মসাতের সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে, নবীগঞ্জ উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির মাসিক সভার সিদ্ধান্তক্রমে এ ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্তকমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে চাল চুরির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গত ৭ জুলাই ইমদাদুর রহমান মুকুলকে সাময়ীক বরখাস্ত সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির হতদরিদ্রদের তালিকা প্রণয়নে ব্যাপক অনিয়ম, নিয়ম বর্হিভূতভাবে ডিলারকে দিয়ে তালিকা প্রস্তুত, তালিকায় মৃতব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্তি ও একই ব্যক্তির নাম একাধিকবার অন্তর্ভুক্তি এবং বরাদ্দকৃত চাল সঠিক ব্যক্তিদের মাঝে বিতরণ না করার অভিযোগে গজনাইনপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হবার পর নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতির পদ থেকেও তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। গত ১৪ জুলাই নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তাকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করা হয়। এরপর থেকে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অপরদিকে, শুধু ২২৯ জন লোকের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর চাল আত্মসাতের অভিযোগই নয়, আরো নানা অভিযোগ রয়েছে ইমদাদুর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে দুই মহিলার ভিজিডির চাল আত্মসাৎ অভিযোগের তদন্তও সম্পন্ন হয়েছে। বিরোধ ও মামলা মোকদ্দমা সালিশে নিষ্পত্তি করে দেয়ার নামে উভয়পক্ষের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা নিজের কাছে জমা রেখে সালিশ না করে ওই অর্থ আত্নসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *