সুরমার ঢেউ সংবাদ :: সারাদেশে ধান-চাল সংগ্রহের মেয়াদ আরো ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় এ সময় বাড়ানো হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তর ১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সময় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে, চলমান বোরো সংগ্রহ অভিযান এবং আসন্ন খাদ্যবান্ধব কার্যক্রম বিষয়ে মতবিনিময় করতে মঙ্গলবার রাতে সিলেট এসে পৌঁছেন খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ। সফরসূচি অনুযায়ী, ২ সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল ৯টায় সিলেট সার্কিট হাউজে স্থানীয় প্রশাসন, চালকল মালিকদের প্রতিনিধি ও খাদ্য বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাথে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় যোগদান করেন। পরে সকাল ১১টায় সিলেট সদর খাদ্য গুদাম এবং অনির্ধারিত খাদ্য গুদাম পরিদর্শন করেন।
খাদ্য বিভাগ সূত্রমতে, নির্ধারিত ৪ মাসে অর্থাৎ গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সিলেট অঞ্চলে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৫৬ ভাগ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি সংগ্রহ হয়েছে আতপ চাল। শতকরা হিসেবে এর হার লক্ষ্যমাত্রার ৭৭ ভাগ। এছাড়া ক্রয় করা হয়েছে বোরো ধান ৪১% ও সিদ্ধ চাল ৫০%। সিলেটের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আমজাদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সূত্রমতে, সিলেট অঞ্চলে চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ১ লক্ষ ৩২ হাজার মেট্রিক টন ধান-চাল সংগ্রহের কথা ছিল। এর মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন ধান, সাড়ে ৩৩ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও সাড়ে ২৮ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল। কেজি প্রতি ২৬ টাকা দরে ধান, ৩৬ টাকা দরে সিদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা দরে আতপ চাল সরকারকে দিতে এ অঞ্চলের ৫০৪ জন চালকল মালিক বা মিলার চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী ৬০ জন চালকল মালিক বা মিলার সরকারকে কোনো চাল দিতে পারেনি। সময় শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে খাদ্য অধিদপ্তর।
এদিকে, নির্ধারিত সময়ে এ অঞ্চলে ধান-চাল সংগ্রহ করা হয়েছে ৬৭ হাজার ৭৮৯ মেট্রিক টন- যা শতকরা হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার ৫৬ ভাগ। এর মধ্যে ধান ২৯ হাজার ৫৩ মেট্রিক টন অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৪১ ভাগ, সিদ্ধ চাল ১৬ হাজার ৮৭৮ মেট্রিক টন অর্থাৎ শতকরা ৫০ ভাগ ও আতপ চাল ২১ হাজার ৮৪৮ মেট্রিক টন অর্থাৎ শতকরা ৭১ ভাগ ক্রয় করা হয়েছে। চালকল মালিক ও কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এজন্য ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ যোগাতে এবার কৃষকদের দুশ্চিন্তা নেই। ফলে ধান বিক্রি না করে তারা অধিক লাভের আশায় ধান মজুদ করে রাখছেন। আবার, প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে যে ধান বিক্রি করছেন তা সরকারের চেয়ে বেশি দামে বাড়ি থেকে আড়তদাররা কিনে নিচ্ছে। এ কারণে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। তবে, কৃষি প্রণোদনা বা অন্যকোন কৌশলে মজুদ না করে প্রান্তিক কৃষকদের ধান বিক্রিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাহলে চালকল মালিকরাও চুক্তি ঠিক রাখতে পারবে এবং ধান-চাল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা অনেকটা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সিলেটের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আমজাদ হোসেন বলেন, বাড়তি সময়ের মধ্যে ধান-চাল লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে আমাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি থাকবেনা। প্রয়োজনে আমরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের ধান বিক্রিতে উদ্ধুব্ধ করবো। তিনি বলেন, সিলেটে চালকল মালিকদের সাথে মহাপরিচালক নিজেই বৈঠক করার পর আমরা আশাবাদী, ধান-চাল লক্ষ্যমাত্রা আমরা পূরণ করতে পারবো। গত ৩০ আগষ্ট রোববার ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হওয়ায় ফের আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর আগে গত ২৬ এপ্রিল থেকে বোরো ধান এবং ৭ মে থেকে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছিল।