সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দলই চা বাগানে দীর্ঘ ৩৭ দিন পর কাজে যোগ দিয়েছে চা শ্রমিকরা। উপজেলা প্রশাসন, চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও মালিক পক্ষের যৌথ বৈঠক শেষে দ্রুততম সময়ে মামলা প্রত্যাহার ও বিতর্কিত ব্যবস্থাপককে বদলীর আশ্বাসে ৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার চা বাগান খুলেছে এবং দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছে। গত ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় আকস্মিক নোটিশ দিয়ে দলই চা বাগান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে গত ২৯ জুলাই থেকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগ তিন দফা বৈঠক, মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে ১৭ আগষ্টের বৈঠকের পরও দলই চা বাগান বন্ধ ছিল। এ নিয়ে শ্রীমঙ্গলস্থ শ্রম অধিদপ্তর কর্মকর্তার কার্যালয়ে কয়েক দফা বৈঠকের পরও কোন লাভ হয়নি। সর্বশেষ ২ সেপ্টেম্বর বুধবার মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদের পরামর্শে ও নির্দেশনায় ৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় আবারও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইসলাম, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শ্রীমঙ্গল এর উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মাহবুবুল হাসান, কমলগঞ্জ থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান, দলই চা বাগান কোম্পানীর উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী, সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি, মনু-দলই ভ্যালী সভাপতি ধনা বাউরী, সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা, দলই চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি নায়েক, সাধারণ সম্পাদক সেতু রায়সহ চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। শারিরীক অসুস্থতার জন্য বৈঠকে উপস্থিত না থাকলেও দলই চা বাগান কোম্পানির এজিএম খালেদ মঞ্জুর খান মোবাইল ফোনে শ্রমিকদের দাবী দাওয়া মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন। তবে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মো. জাকারিয়াসহ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ব্যাপক আলোচনা শেষে বিতর্কিত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে বদলী ও চা শ্রমিকদের জন্য বন্ধকালীন মজুরী ও বাগান কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত মামলা দ্রুততম সময়ে প্রত্যাহারের আশ্বাস দেয়া হয়। এরপর বেলা সাড়ে ১২টা থেকে শ্রমিকরা প্লান্টেশন এলাকায় চাপাতা উত্তোলন কাজে যোগ দেয়।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরী বলেন, দলই চা বাগানের বিতর্কিত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামের বাগানে প্রবেশ না করা, চা শ্রমিকদের জন্য বন্ধকালীন মজুরি দেয়া ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের নামে দায়েরকৃত মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাহারের আশ্বাস প্রদান করেন মালিকপক্ষ। এ অশ্বাসে সন্তোষ প্রকাশ করে দীর্ঘ ৩৭ দিন পর দলই চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক দীর্ঘ ৩৭ দিন পর দলই চা বাগান খোলা ও চা শ্রমিদের কাজে যোগদানের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দলই চা বাগান মালিক পক্ষের দেয়া আশ্বাস পূরণ হলে আর সমস্যা থাকার কথা নয়। তিনি জরুরী ভিত্তিতে শ্রমিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় শ্রম আইন লঙ্ঘন করে দলই চা বাগান কর্তৃপক্ষ। পরে তারা চা বাগান বন্ধ ঘোষণা করে। পরদিন ২৮ জুলাই সকাল থেকে বেআইনিভাবে বন্ধ করে দেয়া এবং বিতর্কিত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকরা। ২২ আগস্ট রাতে দলই চা বাগান কোম্পানির এজিএম খালেদ মঞ্জুর খান বাদী হয়ে মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু, চা শ্রমিক নেতাসহ ১৩ জনের নামে গতিরোধ করে মারধর, গাড়ি ভাঙচুর ও টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে মামলা করেন।
